কার্গিলে একটা রাত কাটিয়ে আমাদের বেড়ানোর শেষ ডেস্টিনেশন শ্রীনগরের দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম আমরা। শেষ দিনে খাদের ধার ঘেঁষে গাড়ি ছোটানো, রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক থেকে কাশ্মীরি খাবারের স্বাদে ডুবে যাওয়া, ডাল লেকের জলে ভেসে থেকে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উপলব্ধি করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদের, সেইসব অনুভূতি ভাগ করে নিচ্ছি লাদাখ ভ্রমণের শেষ পর্বে।
6 সেপ্টেম্বর, 2017
রাতেই কার্গিল-এর হোটেলে বলা ছিল আমরা 6 টার আগে বেরিয়ে যাব। ওনারা ব্রেকফাস্ট রেডি করে গাড়িতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। ভোর রাতে উঠে মানুষ সমান লম্বা জানলার পর্দা সরিয়ে দেখলাম ড্রাইভার সাব হাজির। তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে বাক্স বেঁধে ব্রেকফাস্ট নিয়ে যোজিলা পাস এর দিকে যাত্রা শুরু হল আমাদের। 9 টায় পাস এর পাশ না কাটালে নাকি 3 টের আগে ক্রস করা যাবে না আর। ড্রাইভার এর এই বক্তব্যে যদিও ঝোল আছে বলে মনে হয়েছিল আমার, বেকার সাতসকালে উঠতে হল বলে রাগও হচ্ছিল বেজায়। পাস পেরোনোর আগে দ্রাস এ নামা। তাই তারা ছিল বেশি। পাশে বয়ে চলা সুরু নদীকে সঙ্গে নিয়ে কিছুদূর চলার পর পাহাড়ের শোভায় মন দিয়েছিলাম। বেশ এদিক ওদিক দেখতে দেখতে চলার ফাঁকে ঘুমে ঢুলে পড়ছি টুকটাক। আবার চোখ মেলে ধূসর বা সবুজ পাহাড় দেখে নড়েচড়ে বসছি।
এভাবে চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম দ্রাস। দ্রাসের নাম সাধারণ মানুষের কাছে বেশি পরিচিত করেছে কার্গিলের যুদ্ধ। 1948 এ ইন্দো-পাক যুদ্ধ ও 1999 এর কার্গিল-এর যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই দ্রাস। ড্রাইভার সাব তখন বলছে এই এলাকায় রাস্তায় বন্দুক নিয়ে সৈন্যদের ছুটোছুটি, গুলিবর্ষণ, মৃত্যু, মানুষের আত্মত্যাগের জ্বলন্ত ইতিহাস। দ্রাস-এর ওয়ার মেমোরিয়াল-এ নেমে লোহার গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। আসে-পাশে পাহারায় রত কয়েকজন সেনা। লোকজন এখন একেবারেই নেই। মাঝখানে সগর্বে রক্ষিত ভারতের বিজয় পতাকা দেখে আমরা চলে গেলাম মেমোরিয়াল এর মূল অংশে। এখানে সজ্জিত যুদ্ধে নিহত সেনাদের স্বরণে নামাঙ্কিত ফলক। চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে যেতে লাগলাম তাঁদের নাম। পড়তে পড়তে মনে পরে গেল টিভিতে দেখা কার্গিলের দৃশ্য। বরখার লাইভ। টাইগার হিল, তোললিং পাহাড় কব্জা করে নিয়ে পাকিস্তানি সেনা এন এইচ 1ডি, দ্রাস ও সংলগ্ন অঞ্চলে আচমকা আক্রমণ করে পাহাড়ের আড়াল থেকে। এক জওয়ান আমাদের চিনিয়ে দিলেন খাড়াই উঁচু পাহাড় টাইগার হিল, এ পাহাড় বেয়ে উঠেই ভারতীয় সেনা পাকিস্তানকে পরাহত করে 99-এর যুদ্ধে। কী চরম বলিদান, দেশের স্বার্থে কী কঠিন লড়াই চলে দিনের পর দিন। এই শান্ত স্নিগ্ধ সকালে যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে সিনেমায় দেখা কার্গিলের যুদ্ধ জ্বলজ্বল করতে লাগল চোখের সামনে। আমরা যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র, সেনাদের লড়াইয়ের স্মৃতি, বিজয়পতাকা উত্তোলনের ছবি দেখতে ঢুকে পড়লাম মিউজিয়ামে। খানিক্ষণ সময় এখানে কাটিয়ে আবার গাড়িতে উঠে চললাম যোজিলা পাসের উদ্দেশে। গাড়িতে উঠেও আমাদের আলোচনায় ঘিরে থাকল ভারত-পাক সম্পর্ক, যুদ্ধ-রাজনীতি। টাইগার হিলের ওপার থেকে যে এলাকা দেখে গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছিল, যুদ্ধের পর সেখানে দৃষ্টি পথ আটকে দিতে উঠেছে বিশাল পাঁচিল। সেই পাঁচিলকে পাশে রেখে ছুটে চলল আমাদের গাড়ি।
দ্রাস থেকে যোজিলা ঢুকতে লেগে গেল আরও 1 ঘন্টা। এর আগে পরে কোন চেকপোস্ট-এ যে 9 টার চেকিং টা হল সেটা আমি মোটেও বুঝতে পারলাম না। যাই হোক, যোজিলা পাস সত্যিই যেমন সুন্দর তেমন ভয়ানক। পাহাড়ের প্রতি বাঁকে হেয়ার পিন বেন্ড। রাস্তা এই ভাঙা চোরা তো এই পাকা। সরু রাস্তার উল্টোদিক থেকে ঘন ঘন লরি, স্কুল বাসের আনাগোনা। আর এইসব মুহূর্তে গাড়ির হাফ চাকা প্রায় খাদের দিকে বেরিয়ে থাকা দেখে বুক দুরু দুরু। কোথাও কোথাও রাস্তা এত সরু কি করে দুটো গাড়ি একে অপরকে ক্রস করে ভেবেই ভয় লাগল। খানিকক্ষণ এক জায়গায় তো গাড়ি আটকেই গেল উপরের রাস্তায় ধস সরানোর ফলে। গাড়ি এগিয়েও পিছিয়ে আসতে হল উপর থেকে ঝরঝর করে পাথর পড়ায়! আমাদের তো সেসব দেখে ভয়ে বুক শুকিয়ে গেছে। গাড়ি টা দাঁড়িয়ে আছে খাদের ধারে আর সামনেই উপর থেকে পাথর পড়ছে নানা সাইজের। নীচে একটা পাথর সরানোর গাড়ি, উপরেও একটা। যাওয়া আদৌ যাবে কিনা বুঝতে পারছি না আর ড্রাইভারটিও টেনশন দিয়ে যাচ্ছে। খানিকক্ষণ এভাবে অপেক্ষার পর রাস্তা চালু হয়ে গেল। আমরাও ধড়ে প্রাণ পেলাম।
গাড়ি চলল আঁকাবাঁকা পথ ধরে আরও কয়েক ঘণ্টা, আমরা সোনমার্গ-এর দূরত্ব লেখা মাইলস্টোন দেখে শিহরিত হলাম বার বার। মেষশাবকের দল দেখে ছবিতে দেখা কাশ্মীর চাক্ষুষ করলাম যেন। পাহাড়ের গায়ে ফ্লুরোসেন্ট রঙের টেন্ট, গ্ল্যাসিয়ার-এর নেমে আসার পথ, কোথাও এক থোকা ফ্যানার মতোন জমে থাকা ধুলোমাখা বরফ চোখে পড়তে লাগল। ভেড়ার দল গাড়ি দেখে তখন নিজেদের তালে উঠে যাচ্ছে পাহাড়ের গা বেয়ে, এদিকে রাখালবালক নানান শব্দ করে ডেকেও তাদের নামাতে পারছে না। এসব নানান ভালোলাগা মুঠোবন্দি করতে করতে পৌঁছে গেলাম সোনমার্গ। সবুজ পাহাড়ের ভ্যালি। পাশ দিয়ে নেমে গেছে মাচই গ্ল্যাসিয়ার গলে নেমে আসা সিন্দ নদী। এখানে যদিও নালা বলা ভালো, কিন্তু স্রোতস্বিনী। বড় বড় গাছগুলো রুক্ষ মরুপাহাড় পেরিয়ে আসার পর প্রাণের আরাম দিল। ভ্যালিতে ঘোড়াও চোখে পড়ল। আমরা গাড়ি থেকে নেমে এখানে অল্পক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম প্রকৃতির রূপ। ঠান্ডার প্রকোপ অনেক কমে এলেও এখানে হাওয়া ঠান্ডা। আমরা গাড়িতে উঠে চললাম শ্রীনগরের উদ্দেশে।
সোনমার্গ পেরিয়ে কিছুটা যাওয়ার পর গাছপালা, জনবসতি চোখে পড়তে লাগল। দেখলাম রাস্তার ধারে সুন্দরী কাশ্মীরি মহিলা আপেল-এর পসরা নিয়ে বসেছেন। দেখতে পেলাম আপেল গাছও। লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে চলল গাড়ি। শ্রীনগর ঢোকার মুখে এক জায়গায় পৌঁছে সামনে গাড়ির লম্বা লাইন দেখে দাঁড়িয়ে পড়তে হল। সামনে কিছু নিয়ে বিক্ষোভ চলছে। কাশ্মীর ভয় আবার উঁকি-ঝুঁকি মারতে লাগল। জানা গেল আধার কার্ড-এর দাবিতে পথ অবরোধ, পুলিশ এসে গেছে, রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। মিনিট 15-20 দাঁড়ানোর পর পেরিয়ে যাওয়া গেল সেই এলাকা। এরপর আর দাঁড়াতে হয়নি। শ্রীনগরে ঢুকে ডাল লেকের পাশ দিয়ে গাড়ি ছুটে পৌঁছে দিল হোটেল-এ। হোটেল আগে থেকে বুক করা ছিল। ফোন করে রাস্তা বুঝে পৌঁছে গেলাম সেখানে। শ্রীনগরে প্রচুর হোটেল। এসে বুক করলেও না পাওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। পেটে আমাদের তখন আগুন জ্বলছে। সারাদিনে শুকনো পরোটা আর ডিম সেদ্ধ ছাড়া কিছু পেটে পড়েনি। ঘড়ি বলছে 3 টে। হোটেলে ঢুকতেই চা, নিজস্ব বাগানের আপেল, আঙ্গুর, কলা সহযোগে ওয়েলকাম পেলাম। ঠিকই ছিল আমরা শ্রীনগরের বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট মুঘল দরবার-এ খাব। তাই ফলমূলে নজর না দিয়ে তাড়াতাড়ি করে আমরা রেডি হয়ে চললাম রেসিডেন্সি রোড। অটো পেয়ে গেলাম বেরিয়েই। অটো থেকে নেমে মুঘল দরবারের সামনে এসে একটু বিভ্রান্তি হবে। কারণ দু-দুটো মুঘল দরবার, এক এ বিল্ডিং-এর ওপরে ও নীচে। সাইনবোর্ড দেখেই বুঝলাম ওপরের টাই আদি অকৃত্রিম। দরজার সামনে থেকেই ওয়েটার খাতির করে নিয়ে গিয়ে বসাল টেবিলে। কাশ্মীরিদের আতিথেয়তার কথা শুনেছিলাম, টের পেলাম এখানে। ইয়াকনি পোলাও, গুস্তাবা এসবের নাম শোনা ছিল বলতেই সাজেশন এল ওয়াজওয়ান অর্ডার করার, সেখানে সব কাশ্মীরি ডিশই টেস্ট করে ফেলা যাবে। প্রথমে টেবিলে তামার পাত্রে এল সাদা ভাতের ওপর সাজানো তাবাক মাজ (ভাজা ল্যাম্ব রিব), শিক কাবাব, ওয়াজা চিকেন-এর জিভে জল আনা প্ল্যাটার। তারপর একে একে লাল গ্রেভির কাশ্মীরি কোফতা রিস্তা, মাটন রোগান জোস, মাটন কোর্মা, দইয়ের গ্রেভিতে বানানো মাটন-এর কোফতা ডিস গুস্তাবা, কাশ্মীরি পোলাও, চিকেনের একটা ডিশ, স্যালাড, রায়তা সবকিছুই। ওয়াজওয়ান কিন্তু একা খাওয়ার ডিশ না। 4-5 জন একসঙ্গে মাটিতে কার্পেট পেতে বসে তামার বড় থালা থেকে ভাগ করে হাত দিয়ে এই খাবার খাওয়ার রেওয়াজ আছে। এতো খাবার দেখে আমরা প্রাথমিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেও খাকিক্ষণেই বুঝেছিলাম শেষ করার সাধ্য আমাদের নেই। প্রতিটা খাবার এদিকে ভীষণ সুস্বাদু। পেট ভরে খাওয়ার পরও দেখলাম অনেককিছুই পরে আছে, এদিকে ওয়েটার তো তাঁর বাড়িতে খেতে যাওয়ার মতোন জোরজবরদস্তি করছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে যখন উঠলাম হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। শেষ করতে না পারা খাবারগুলো দেখেও কষ্ট হচ্ছে। ঠিক হল, আমরা হেঁটে হেঁটে ডাল লেকের আশপাশ ঘুরে দেখে বিকেলটা কাটাব।
লেকের ধার ধরে হাঁটতে শুরু করতেই শিকারা চালকদের ডাক শুরু হল। ইচ্ছেটাও বাড়ল বার বার ডাকে। সারাদিনে একটাও টিপ না হওয়ার কথাই বার বার কানে এল। একজন বললেন, 200 টাকায় 2 ঘণ্টা। আমরা জনপ্রতি 200 ধরে যখন শিকারায় উঠছি, উনি জানালেন জনপ্রতি না, মাত্র 200 টাকাই উনি নেবেন। আমরা চমকালাম। আমাদের দলের একজন আগে এসেছে শ্রীনগর। মাথাপিছু 300 টাকায় শিকারায় চেপেছে, কিন্তু কাশ্মীরের সেই সুদিন গেছে তা জানলাম লেকের জলে ঘুরতে ঘুরতে। টুরিস্ট আসা ভীষণ কমে গেছে, আমরা ওঠায় উনি 2 দিন পর একটা ভাড়া পেলেন। কাশ্মীরিদের বর্তমান পরিস্থিতির নানান কথা শুনতে শুনতে আমরা ভেসে চললাম লেকের জলে। ডাল লেকে ভাসতে ভাসতে মনে হল সত্যিই এটা জন্নত। বহু মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা, রুজি-রুটি এই লেককে ঘিরেই। আর এখানেই মানুষ এখন কত অসহায়। এসব ভাবতে ভাবতে দেখছি জল টলটল করছে, উপরে নীল আকাশ, পাখির দল উড়ে যাচ্ছে মেঘের বুক চিড়ে। হঠাৎ দুটো পাখি শিকারার পাশে এসে ডুব সাঁতার দিয়ে আবার ডানা মেলে উড়ে গেল। একটু এগোনোর পরই আমরা চলে এলাম পাশাপাশি দাঁড়ানো হাউজ বোটগুলোর সামনে। জলের দিকে তাকালে ভিতরের ফ্লোরা ফনাদের নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছি। আরও খানিকটা এগিয়ে একপাশে ফুটে থাকা পদ্মফুলের দেখা মিলল। ভাসতে ভাসতে চালক আমাদের হাত তুলে তুলে দেখাতে লাগলেন ওইদিকে নিশান্ত বাগ, ওখানে শালিমার বাগ, ওটা শংকরাচার্জ মন্দিরের চুড়ো, ওখানে হরি পর্বত এইসব, কিন্তু আমার তখন এই ভেসে থাকতেই আনন্দ। আস্তে আস্তে বিকেল নামছে, রোদ্দুরটা মিঠে, জলের দোলায় ভরা পেটে ঘুম ঘুম আসছে। ভাবছি হানাহানি, আতঙ্ক, ভেদভেদগুলো ম্যাজিক করে ভ্যানিশ করে দিতে পারলে তো বেশ হত।
দেখলাম জলের উপর শিকারায় কেশর, কাবাব ও আরও নানান খাবারের পসরা সাজিয়ে ঘুরছেন বিক্রেতারা। তখন পেটে জলধরণের জায়গাও নেই আমাদের। ভোরে এলে এখানে শিকারা ভর্তি ফুল সাজিয়ে বিক্রেতাদের দেখা যায়। এরপর ভাসতে ভাসতে আমরা পৌঁছে গেলাম ফ্লোটিং মার্কেটের দিকে। এখানে জলে প্রচুর গাছপালা, পানা, জঞ্জালও। সেসব কাটিয়ে কাটিয়ে আমরা একটা জামা কাপড়ের দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। আমাদের দলের কজন ঢুকে গেল দোকানে। আমি আর অর্ক ভেসে রইলাম। দোকানের বাইরে বসা কাশ্মীরি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কলকাতা, কাশ্মীরের সাধারণ জনজীবন, পিলেট গান, মিডিয়ার অপপ্রচার ইত্যাদি ফিরে ফিরে এল। তখন সন্ধে নামব নামব করছে, পুরো অম্বিয়ান্সটা “সোচো কি ঝিল কা শহর হো” টাইপ। পাশ দিয়ে আরও দু একটা শিকারায় কাশ্মীরি পরিবারকে যেতে দেখলাম। এদের লেকের জলেই ঘর-সংসার। ফুটফুটে একটা কাশ্মীরি বাচ্চা আমাদের দেখে হাত নাড়ল। আমরা জুয়েলারি, পেপার মেসি, ড্রাই ফ্রুট-এর দোকানে ঢুঁ মারলাম। সঙ্গে নিলাম অনেকরকম ড্রাইফ্রুট। অন্ধকার হয়ে গেল লেকের জলেই। কখন 2 ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে খেয়াল করার প্রয়োজনই হয় নি। অন্ধকারে হাউজ বোট-এর কাঠের সূক্ষ কাজ হলুদ আলোয় চকচক করছে, দূরের পাহাড়ের গায়ে গায়ে বাড়ির সারি, দোকানগুলোয় টিমটিম করে জ্বলা আলো মায়ার চাদর বুনছে। আমরা সেসব দেখতে দেখতে ফিরলাম পাড়ে। এই নিপাট ভালো কাশ্মীরি মানুষটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম লেকের ধার ধরে। কাছাকাছি দোকানগুলো থেকে কিনে নেওয়া হল পরিবার ও বন্ধুদের জন্য টুকরো উপহার। এই জলবিহারটা, মানুষগুলোকে কাছ থেকে একটু হলেও জানতে পারাটা বেড়ানোর আনন্দের মধ্যে মনকেমন গুঁজে দিল।
অটো ধরে ফিরলাম হোটেল। আমাদের ডিনার হোটেলেই। পেট তখনও ভরা। অল্প করে খেয়ে আমরা শেষ দিনের আড্ডা জমালাম। রাত পেরোলেই এয়ারপোর্ট, ঘরে ফেরা। ভালোলাগা আর মনকেমন ঘিরে রইল সবাইকে। আবার একসঙ্গে এখানেই ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি জামাকাপড়ের সঙ্গে যত্ন করে প্যাক করে নিলাম সুটকেসে।
আরো কিছু লেখা:
লাদাখ ভ্রমণের প্রথমাংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
লাদাখ ভ্রমণের দ্বিতীয়াংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
লাদাখ ভ্রমণের তৃতীয়াংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
লাদাখ ভ্রমণের চতুর্থাংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
লাদাখ ভ্রমণের পঞ্চমাংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
Follow me on Facebook & Instagram.