Guilin থেকে বুলেট ট্রেনে চেপে আমরা রওনা দিয়েছিলাম kunming. Yunan Province এর অন্যতম বড় শহর Kunming. বেশিরভাগ বড় বড় কোম্পানির হেড কোয়ার্টার, আকাশ ছোঁয়া হোটেল, শপিং মল নিয়ে সাজানো গোছানো এই শহর। আমাদের ট্রেন Guilin পৌঁছেছিল যখন তখন ঘড়ি সন্ধে সাড়ে 7 টা ছাড়িয়েছে। ট্রেন থেকে দেখা আরও একটা দারুন সূর্যাস্ত তখন চোখে লেগে আছে। ট্রেন স্টেশন থেকে বেরিয়েই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। পর পর ট্যাক্সি এসে দাঁড়াচ্ছে এয়ারপোর্ট এর মতো। লাইন দিয়ে প্যাসেঞ্জার নিয়ে ছুটে চলেছে গন্তব্যে। আমাদের নম্বর কিটুক্ষণেই এসে গেল। Guilin-এ দেখলাম ক্যাব-এর ভিতরে ড্রাইভারের সিট আলাদা করে কভার করা প্লাস্টিক কেসিং করে, যেন সে একটা সি-থ্রু খাঁচায় বসে আছে! এমন অদ্ভুত সিস্টেম প্রথম এ শহরেই চোখে পড়ল। আমাদের হোটেল IBIS সিটি সেন্টারের কাছাকাছি। রওনা দিলাম সেদিকে।
Guilin-এর মূল রাস্তায় প্রবেশ করেই দেখা পেলাম আলোয় সাজানো উঁচু উঁচু বাড়ির। রাস্তা জুড়ে ফুলের সাজ। আলোগুলোয় নানা ধরণের ডিজাইন। এ রাস্তা সে রাস্তা হয়ে আমরা অবশেষে এসে থামলাম হোটেল-এর সামনে। সামনের রাস্তায় মাঝে ডিভাইডার হিসেবে লম্বা বাহারি ফুলের সারি। মিষ্টি গোলাপি রঙের ফুল উপচে পড়ছে। গাড়ি থেকে মালপত্র নামিয়ে ঢুকে পড়লাম IBIS-এ। IBIS এ Halloween উপলক্ষ্যে ডেকোরেশন। রিসেপশনিস্টরাও থিম মাথায় রেখে সেজেগুজে আছে। রুম বেশ ছিমছাম সাজানো, পরিষ্কার পরিছন্ন। জানলা দিয়ে সামনের রাস্তার ভিউ। আমরা ঠিক করলাম ফ্রেশ হয়ে খেতে যাব। নীচে নেমে রিসেপশনিস্ট-কে ওখানকার স্পেশালিটি Bridge Rice Noodles কোথায় পাব জানতে চাওয়ায় সে জানান এখানে 9 টার মধ্যেই রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। আমরা দেখলাম সময় নেই। বেরিয়ে দেখি বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খানিকটা হেঁটে একটা বেকারি দেখেই ঢুকতে ইচ্ছে করল। নানান রকম কেক পেস্ট্রি, কুকি দেখেই মন খুশ। টুকটাক ডেজার্ট কিনে আবার রেস্টুরেন্ট এর খোঁজে এগোলাম। কিন্তু সেরকম কিছু চোখে না পড়ায় ঢুকে পড়লাম Dicos-এ। এটা KFC Mac D এর মতোই একটা ফুড জয়েন্ট। সেটাও তখন প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। আমরা বার্গার প্যাক করিয়ে নিলাম। এরপর ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে লোকাল বিয়ার কিনে ফিরে গেলাম রুম-এ। চীন দেশে আমাদের শেষ রাত এটা, রুমেই সেলিব্রেট করলাম।
Kunming এ দেখার জায়গা আছে বেশ কিছু। কিন্তু আমরা এ শহরে একদিনের অতিথি হওয়ায় বাদ দিয়েছিলাম বেশিরভাগই। ইচ্ছে ছিল টুকটাক পার্ক, রাস্তা-ঘাট এসব দেখেই দিনটা কাটিয়ে দেব। তাই বেড়ানোর তালিকা থেকে স্টোন ফরেস্ট (Zhangjiajie ঘুরে আসার কারণে আর দেখার ইচ্ছে হয়নি), ওয়েস্টার্ন হিল ফরেস্ট পার্ক (এখান থেকে DianChi Lake সবচেয়ে ভালো দেখা যায়) বাদ পড়েছিল। ঠিক ছিল Dianchi lake দেখার জন্য Daguan Park যাব। এ জায়গা আগে মূল লেকের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সময়ের সঙ্গে জল কমে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
আমরা সকালে উঠে ব্রেড, কেক আর আইসড টি দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে ট্যাক্সি ধরে বেরিয়ে পড়েছিলাম। প্রথম গন্তব্য Green Lake park. গোটা রাস্তা জুড়েই শুধু ফুলের সাজ। দেওয়াল, রেলিং, ডিভাইডার সব জায়গাতেই নানা রঙের ফুল। এসব রাস্তায় হেঁটে ঘুরতে সবচেয়ে ভাল লাগে। আমরা Green lake park পৌঁছে দেখলাম সেখানে কোনও টিকিট নেই। ফুলে ফুলে ভরা পার্ক, কোথাও বাঁশ গাছের প্ল্যান্টেশন, কোথাও দীঘি জুড়ে পদ্ম, পুরনো চীন ভাস্কর্যের আদলে তৈরি বসার জায়গা। স্থানীয় মানুষেরা গল্প করছেন কোথাও বসে, আর্ট স্কুলের ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন জায়গায় বসে ছবি আঁকছে, কেউ কেউ আবার হেঁটে বেড়াচ্ছেন, একদল লোকজন গানের তালে তালে নাচছে দেখলাম একটা জায়গায়। সবাই খুশি, ঝলমলে। আমরাও হেঁটে হেঁটে ঘুরলাম এদিক-ওদিক। বেশি সময় কাটানোর মতো কিছু নেই সেখানে। বেরিয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি। পার্কের সামনে থেকেই ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম।
আমাদের পরবর্তী স্টপ Daguan park (grand view park), এখান থেকেই DianChi Lake দেখা যায়। নেমে টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। টিকিট জনপ্রতি 20 Yuan. এই পার্কটা নানান ফুলে সাজানো। সিঁড়ি জুড়ে চন্দ্রমল্লিকার টব সার দিয়ে সাজানো। বিশাল পার্ক, লেকের জলে বোটিং-এরও ব্যবস্থা আছে। আমরা নানান গাছ, ফুল, আলো-ছায়ার খেলা দেখতে দেখতে ঘুরতে লাগলাম। পার্কে গেলে নানান ধরণের মানুষ দেখা যায়। কেউ হাঁটছে, কেউ বসে গল্প করছে, কেউ নিজের মনে গান গাইছে, কেউ রোদ পোহাচ্ছে, কেউ প্রেম করছে, কেউ কেউ আবার বোর্ড গেম খেলছে। এদের নানান সাজগোজ, নানান আদব-কায়দা। এতদিনের বেড়ানোর এই প্রথম উদ্দেশ্যেহীন ঘুরে বেড়ানো, তাই সাধারণ মানুষদের খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ অনেক। এ সব সাতপাঁচ দেখতে দেখতে অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেললাম। এই পার্কে খাওয়ার স্টল আছে অনেকগুলো। টুকটাক স্ন্যাকস অনেকরকমই রয়েছে। আছে লোকাল চা, উড ক্রাফট, সুভেনিয়র শপ। আমরা সেসব দেখে বেরিয়ে পড়লাম কুনমিং শহরটাকে আরও একটু চিনে নিতে।
রাস্তা থেকে বেরিয়ে খানিকটা হেঁটে এসে দেখলাম খালের ধারে বাঁধানো বসার জায়গা। হলুদ পাতার গাছের ফাঁক দিয়ে রোদ ঠিকরে পড়ছে। ভারি সুন্দর সে দৃশ্য। একটা ট্যাক্সি দেখতে পেয়ে উঠে পড়লাম। হোটেলের কাছাকাছি নেমে পড়লাম একটা জংশন-এ। সুন্দর সাজানো বেকারি, দোকানপাট ঘুরে দেখলাম। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম একটা গলির ভিতর স্থানীয় বাজারে। সেখানে প্রচুর ফল সবজি, নানান রকমের আচার, মাছ-মাংস, চিপস-কেক। এলাকার মানুষজন এখান থেকেই বাজার করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে, চিলি ফ্লেক্স, আচার টেস্ট করে খুব মজা পেলাম।
কুনমিং-এর স্পেশালিটি এখানকার Puer Tea. বিশেষ উপায়ে ফার্মেন্ট করা এই চা ব্লক আকারে পাওয়া যায়। ব্লক থেকে অল্প করে ভেঙে নিয়ে চা বানাতে হয়। বানানোর পদ্ধতিও চমৎকার। প্রথমে চা-এর ব্লকের টুকরো গরম জলে ধুয়ে নিতে হয়, অর্থাৎ প্রথমে চা পাতার ওপর যে জল দেওয়া হয় তা ফেলে দিতে হয়, তারপর সেই টুকরো থেকে দু-তিন রাউন্ড অবধি চা খাওয়া যায়। আমরা একটি টি শপ-এ ঢুকে শিখে নিয়েছিলাম এই চা বানানো ও খাওয়ার পদ্ধতি। এই বিশেষ চা-এর পাশাপাশি রোজ টি এবং আরও অন্যান্য চা সঙ্গে নিয়ে নিয়েছিলাম। কুনমিং-এর সর্বত্র-ই এই চা পাওয়া যায়, তবে অথেন্টিক চা-এর দোকান থেকে কিনলে সঠিক দামে সঠিক কোয়ালিটি পাওয়া যাবে বলে মনে হয়। কারণ 4000 টাকার ব্লক হোক বা 400 টাকার, বাইরে থেকে দেখতে একই।
আমরা হোটেলে ফিরে গিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। সূর্যাস্তের রং তখন ছড়িয়ে পড়ছে আকাশ জুড়ে। রাস্তার আলো জ্বলে উঠেছে। সারাদিন ধরে রোদ পাওয়া ফুলগুলো কিছুটা ক্লান্ত। ক্লান্ত আমরাও। টানা 12 দিনের টো টো কোম্পানি মন একটু বিশ্রাম চাইছে। আমাদের মধ্যে তখন বেড়ানো শেষ হওয়ার দুঃখ ছাপিয়ে ঘরে ফেরার সুখ।
চীন ভ্রমণের প্রথমাংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
চীন ভ্রমণের দ্বিতীয়াংশ জানার জন্য click করুন এখানে।