4 সেপ্টেম্বর, 2017
এই দিনটিকে আমরা মূলত লে-তে ল্যাদ খাওয়ার জন্য রেখেছিলাম। ওই একটু আশপাশের বাজার ঘুরব, লোকাল খাবার খাব, হেঁটে বেড়াব আর সেই সঙ্গে মিস হয়ে যাওয়া দু-তিনটে জায়গা দেখে নেব। ঠিক হয়েছিল শান্তি স্তূপা দিয়ে শুরু করে আমরা হেমিস ন্যাশনাল পার্ক, থিকসে মনেস্ট্রি দেখে লে বাজারে এসে লাঞ্চ সারব আর মার্কেট ঘুরে দেখব। এদিন আমার বেড়ানোর উৎসাহের মূল কারণ বাইকে ঘোরা, চোখ ভরে পাহাড় দেখা। সেই মতোই বাকিরা গাড়িতে উঠলে আমি আর অর্ক চড়লাম হিমালায়ন-এ। সেসময় এটা আমাদের দুজনেরই খুব পছন্দের বাইক। বাইকে স্টার্ট দিতেই মহা আনন্দ। হোটেলের রাস্তা ছাড়িয়ে আঁকা বাঁকা পথ বেয়ে যখন শান্তি স্তূপার রাস্তায় উঠছি টের পেলাম বাইকের মজা। বুঝলাম কেন ছেলে-পুলেরা লাদাখ মানেই বাইকে রোড ট্রিপ বোঝে। অমন ঝকঝকে রাস্তায় ওঠার সঙ্গে চারপাশের ব্রেথটেকিং ভিউ, যেদিকে তাকাই চোখ সরাতে পারি না, মনে হচ্ছে সময় থেমে যাক, এরকমই চেয়ে থাকি। দেখার যেন শেষ নেই।
আজ রোদ আছে বেশ। ঝকঝকে নীল আকাশে সাদা সাদা মেঘ। রোদ পাহাড়ে ঠিকরে চিক চিক করছে। পাহাড়ের গা বেয়ে আরও একটু উঠে এসে থামলাম শান্তি স্তূপা-র বাইরে। এখান থেকে লে-কে আরও ঝকঝকে লাগছে। ছোট ছোট বাড়ি, গাছের সারি, ধূ ধূ মাঠ, ধূসর পাহাড় আর আকাশ জুড়ে নীল, তার মধ্যে দাঁড়িয়ে দুধ সাদা শান্তি স্তূপা। স্তূপার ভিতরে নিঃশব্দে ঘুরে এলাম। অন্যান্য স্তূপার মতই ভিতরটা, বিশেষ কোনও বিশেষত্ব নেই। বাইরে বাড়িঘরে মোমের প্রদীপ জ্বলছে। আমরা স্তূপা প্রদক্ষিণ করতে করতে চারপাশের প্রকৃতির রূপে মোহিত হয়ে গেলাম। চড়া রোদ তখন মাথায়। বেরিয়ে পড়লাম হেমিস-এর উদ্দেশ্যে।
লে থেকে হেমিস যাওয়ার রাস্তা দিয়েই আমরা গতকাল ফিরেছিলাম। খানিকটা আসার পর এ রাস্তা টা বেশ সাজানো গোছানো, দুদিকে গাছ, রুক্ষ ভাবটা কম। খানিকটা এগোনোর পর আবার সেই বিস্তীর্ণ ল্যান্ডস্কেপ। বাইক থেকে সবটা দেখা যাচ্ছে। যেদিকে তাকাই শুধু ধূসর পাহাড়, নীল আকাশ, কোথাও একটু ঝাউ গাছের সারি, ছোট্ট মনেস্ট্রি, সাদা সাদা বাড়ি, পাশ বরাবর বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদী, শেষ না হতে চাওয়া রাস্তা। হেমিস-এ পাক খেয়ে খেয়ে ওঠা টা সবচেয়ে মজাদার। পাহাড়ের ওপর মেঘের ছায়া, উপরে গাছের সারি, নিচে চড়ে বেড়ানো পাহাড়ি গরু, ধুলো ওড়া প্রান্তর, তখন মনে হচ্ছে রোজ বাইকে ঘুরলেই বোধহয় বেশ হতো। হেমিস-এ স্নো লেপার্ড দেখা যায় বলে এই পার্ক বিখ্যাত। কিন্তু এই গরমে তো তাদের দেখা পাওয়া যায় না। পৌঁছে জানলাম 5 দিনের ট্রেক করে জঙ্গলের ভিতরে গেলে তবে জন্তু জানোয়ারের দেখা মেলে। আমরা একটা জংলি হনুমানেরও দেখা পেলাম না। এখানে একটা মনেস্ট্রি আছে। অনেকটা সিঁড়ি ভেঙে ভিতরে ঢুকতে হয়। মনেস্ট্রি লাগোয়া গেডট হাউজও আছে। আমরা আর ওপরে উঠলাম না। একটু বসে সময় কাটিয়ে রওনা দিলাম থিকসে।
থিকসে খোলামেলা সুন্দর। রাস্তার পাশে অনেকটা করে ধূ ধূ ফাঁকা জায়গা তারপর পাহাড়ের দল। আজকের রাস্তা একদম ঝকঝকে, পরিষ্কার। গাঢ় নীল রঙের আকাশের নীচে চারপাশটা চড়া রোদেও কী ভীষণ স্নিগ্ধ। থিকসে-তে অনেকটা ওপরে ওঠা আবার। বাইক বা গাড়িতেই যাওয়া যায়। বাইরে পার্ক করে আমরা টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম। এই মনেস্ট্রি অন্যান্য মনেস্ট্রির মতোই সাদা, ভিতরে লাল আর হলুদ রঙের আধিক্য। জায়গাটা খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, যত্ন করে রাখা। বাহারি ফুলের গাছ লাগানো ঢোকার রাস্তার পাশ বরাবর। উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে থিকসে-কে দেখতে বেশ লাগছে। আমরা এমন সময় এসে পৌঁছেছি উপরে এসে দেখলাম লাঞ্চ ব্রেক শুরু হয়ে গেল। ছোট ছোট লামা-রা তখন সিঁড়ি দিয়ে উঠছে নামছে বই হাতে। আমরা একটু ছায়া দেখে বসে পড়লাম। এখন আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। গল্প আর ছবি তোলায় সময় কেটে গেল। নুবরা থেকে ঘুরে এসে আমাদের শীত পাওয়ার ভাবটা কমে গেছে। তারমধ্যে যা রোদ খুব গরম লাগছে তখন। মনেস্ট্রি শুরুর ঘণ্টা বাজতে আমি ভিতরে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখে এলাম। ভিতরে কি শান্তি, শান্ত, ঠান্ডা। সব মনেস্ট্রির ভিতরেই এই যে লোক থাকা স্বত্বেও একটা নিস্তব্ধতা থাকে সেটা আমার বেশ লাগে। বিশাল বুদ্ধ মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। লাল রঙা কাজ করা কাঠের জানলার ফাঁক দিয়ে বাইরেটা দেখতেও দারুন লাগছে তখন। মনেস্ট্রি-র প্রতিটা ঘর ঘুরে দেখে নিলাম একে একে। এই যে পাহাড়ের কোলে মনেস্ট্রির দাঁড়িয়ে থাকাটা, পিছনে নীল আকাশ আর সাদা মেঘের ব্যাকড্রপে মনেস্ট্রি, পাহাড়ের গায়ে চিকচিক করা আলো, এগুলো এক একটা ফ্রেম, যেগুলো নিয়ে গল্প বলা যায় অনর্গল।
আমরা থিকসে থেকে বেরিয়ে লে শহরের দিকে ফিরতে শুরু করলাম। সেই সুন্দর শেষ না হতে দিতে চাওয়া রাস্তা দিয়ে ছুটে চলল বাইক। আধঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম লে বাজার। লে বাজারে বাইক জমা করে গাড়িটা ছেড়ে দিলাম আমরা। আজ এখানেই খাব। লে-এর হোটেল মালিক প্লাস আমাদের ট্যুর কো-অর্ডিনেটর সোনাম-এর পরামর্শে এখানকার ফেমাস লোকাল ইয়াক বয় রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেলাম। মার্কেট-এর ভিতর একটা সরু জায়গা দিয়ে ঢুকে রেস্টুরেন্ট। খুঁজতে একটু বেগ পেতে হল বটে, গিয়ে দেখলাম বিশাল ভিড়। বসার জায়গা নেই। তবে একটু অপেক্ষা করে জায়গা হল। জীবনে প্রথম মাটন মোমো খেলাম এখানে। মোমো মাংসে ঠাসা হলেও মাটন-এর গন্ধটা ভালো লাগলো না, ওর চেয়ে ভেজ থুকপা বেশি ভাল লাগল। মো থুকপা-ও টেস্ট করলাম। খাওয়া-দাওয়া সেরে বেরিয়ে শুরু হল দোকানপাট ঘুরে দেখা। আজকাল যেখানেই বেড়াতে যাই দেখি সেখানকার লোকাল জিনিসের দাম কলকাতার সেই জিনিসের দামের চেয়ে বেশি। কি জানি টুরিস্ট ছাপ বলে হয়তো বেশি চায়! সব কিছুরই আকাশ ছোঁয়া দাম দেখে শুধু গাড়ি-বাইকে ঝোলানোর ফ্ল্যাগই নেওয়া হল সবার জন্য। আর কিনলাম গাছ পাকা এপরিকট। আমরা আর বেশিক্ষণ না থেকে লোকাল গাড়িতে করে ফিরে এলাম হোটেল-এ। হোটেল-এ ফিরে জম্পেশ একটা ঘুম হল। সন্ধেয় উঠে আড্ডা শুরু হল। এখানে তো আলো কমে গেলে আড্ডা আর টিভিই ভরসা। আমরা সারফারোস দেখলাম টিভিতে। কাল এমনিই কার্গিল যাওয়া। দেশাত্ববোধ এর ডোজ হয়ে গেল এই সুবাদে।
5 সেপ্টেম্বর, 2017
সকালবেলা উঠে থেকে মন ভার। লে ছাড়তে হবে। লাদাখ-এর নীল আকাশ ছেড়ে চলে যাওয়ার যা দুঃখ তা রওনা দেওয়ার পর যত এগিয়েছি তত বেড়েছে। হোটেলের সবাইকে টাটা করার সময়ও বার বার থেকে যেতে ইচ্ছে করছে তখন। আজকের ড্রাইভার শ্রীনগরের, বয়স্ক। উনি আমাদের এখান থেকে কার্গিল ও তারপর শ্রীনগরে নিয়ে যাবেন। আমরা হাতে সময় কম থাকায় লে-মানালি হাইওয়ে দিয়ে আসতে পারিনি কিন্তু লে-শ্রীনগর হাইওয়ের সৌন্দর্য ছেড়ে দেওয়া যায় না। এই রোডট্রিপটা লাদাখ ট্রিপ-এর আর একটা নেসেসারি বিষয়। সবাই জিনিসপত্র গাড়ির ছাদে বেঁধে নিয়ে নিজেদের মতো গুছিয়ে বসলাম। গাড়ি চলছে আর মেঘের সরে সরে যাওয়া দেখছি। আজও রোদ আছে। আমরা সঙ্গমের দিকের রাস্তা দিয়েই চলেছি। আজ আমাদের প্রথম দিন সঙ্গমে ডিউ থাকা রাফটিং-টা করার কথা ছিল। কিন্তু বেরোতে দেরি হওয়া এবং প্রথম দিনের উৎসাহে সবারই খানিকটা করে ভাঁটা পড়ায় সে ইচ্ছেয় সঙ্গমের বালি চাপা দিলাম! খানিকটা লে-শ্রীনগর হাইওয়ে দিয়ে পাহাড় আকাশের রঙের খেলা দেখতে দেখতে যাওয়ার পর আবার পাহাড়ের গা ঘেঁষে এডভেঞ্চারাস রাস্তায় পড়লাম। দুদিকে ভাঙা ভাঙা খাড়াই পাহাড়, মাঝে রাস্তা, কোথাও আবার বরফ গলে পড়া নদীর রেখা। আগের মতোই আবার মনে হল, লাদাখ-এর আসল সৌন্দর্য রাস্তায়, পদে পদে এই অনবদ্য প্রকৃতি একবার দেখে স্বাদ মেটার না।
পাহাড় ঘেরা রাস্তার গা ঘেঁষে চলতে চলতে, মেঘ আকাশের ছবি মনের মধ্যে ফ্রেম করতে করতে সুন্দর রাস্তা ধরে আমরা পৌঁছে গেলাম লামাউরু। এখানে চারপাশের দৃশ্য দেখে চোখ ফেরানো যায় না। ধূসর, সবুজ, নীল, লাল, সাদা, হলুদ কত রং। পাহাড়ের উপর জিগজ্যাগ রাস্তা চোখ জুড়ানো। আমরা গাড়ি থেকে নেমে মনেস্ট্রির দিকে এগোলাম। লামাউরু মনেস্ট্রিটা ভীষণ সুন্দর। মনেস্ট্রি অবধি পৌঁছনোর আগে একটা জায়গায় থমকে দাঁড়ালাম। রাস্তার একদম ধার ঘেঁষে একটা সাদা বেঞ্চ, ওপাশে পাহাড় ঘেরা প্রকৃতির ভিউ। নীচে সবুজ, ওপরে পাহাড়ে মেঘের ছায়া, ডানদিকে পাহাড়ের গায়ে এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া রাস্তা, দূরে আর এক পাহাড়ের ধার ঘেঁষে ছোট্ট সাদা মনেস্ট্রি, সোজা তাকালে পাহাড়গুলো খাঁজে খাঁজে মিলে ছবির মতো ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করেছে। এ জায়গাটা বসে তাকিয়ে থাকলে ঘোর লেগে যাবে। কি শান্ত, সুন্দর। আমরা মনেস্ট্রিতে ঢোকার পথে এখানকার ছাত্রদের দেখলাম, সবাই খুব শান্ত, নিয়মে বন্দি। ওদের যেন হাসতেও মানা। লামাউরু মনেস্ট্রি অনেকটা জাগয়া নিয়ে। পাহাড়ের কোলে বলে যেখানে দাঁড়ানো যায় সেখান থেকেই যা দেখা যাবে মন ছুঁয়ে যাবে। নতুন নির্মাণ ও পুরনো ঐতিহ্য দুইই পাবেন এখানে। পড়ার ঘর, খাওয়ার ঘর, প্রার্থনা ঘর সব দেখে আমরা পুরনো ভেঙে যাওয়া অংশে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ লামাউরুর সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। কিছুক্ষণ এমনিই শান্তভাবে বসে থাকতেও বেশ লাগল। মনেস্ট্রির বাইরে একটা ছোট্ট দোকানে নানান এন্টিক জিনিস দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেক কিছুই কিনে ফেললাম সবাই। গোটা লাদাখ-এ এতো মনেস্ট্রি দেখার পর লামাউরু আমার মনে চিরকালের জন্য বিশেষ জায়গা করে নিল।
এবার আমাদের গন্তব্য কার্গিল। আজ রাতটা ওখানেই কাটানো। গাড়ি ছুটল পাহাড়ি রাস্তা ধরে। আমরা যত এগোতে লাগলাম লে শ্রীনগর হাইওয়ের রূপ আরও বেশি করে ধরা দিতে লাগল। এত সুন্দর রাস্তা একবার না তাকালেই কিছু না কিছু মিস হয়ে যাওয়ার চাপ। রাস্তায় কোনও খানা-খন্দ নেই, কখনো একদিকে খাদ নেমে গেছে, কখনও পর পর হেয়ার পিন বাঁকে তৈরি হয়েছে আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ। পাহাড়ের গায়ের ওই আঁকা-বাঁকা পিচ পথ দেখতে দেখতে যাচ্ছি, হঠাৎ হঠাৎ নীল আকাশের বুকে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যাওয়া পাখি ক্যানভাসটা আরও মনের মতো করে তুলছে। যত এগোচ্ছি দেখা যাচ্ছে আরও বেশি সেনা ছাউনি। মিলিটারি এরিয়া পুরোটাই, এদিকে সিকিউরিটির ভাগটা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। কার্গিল কাশ্মীর যাওয়া নিয়ে আজকাল মানুষের মনে অদ্ভুত ভয় কাজ করে, বাড়ির বড়রা শুনলেই টেনশনে পরে যায়। কিন্তু এত অপূর্ব এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য না দেখতে পারা টা যে কত বড় ক্ষতি তা বলে বোঝানো যায় না। আর এখানকার মানুষজনও তেমন ভালো। কিন্তু এই টেনশনটার কারণগুলোকেও তো উপেক্ষা করা যায় না।
আরও খানিকক্ষণ আসার পর আমরা পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী দেখতে পেলাম। পাহাড়ের গায়ে গ্ল্যাসিয়ার নেমে আসার রেখা এসে সেই নদীতে মিশেছে। দূরে পাহাড়ের চূড়োর রোদ পরে ঝলমল করছে দুধ সাদা বরফ। তখন দুপুর হয়ে গেছে। লে-এর ড্রাইভার ফুনগসুকের সঙ্গে আমাদের খুব বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই ড্রাইভার চুপচাপ। খিদে পেয়েছে জানানোয় কার্গিল ঢোকার আগে একটা ছোট গুমটি দোকানের গিয়ে দাঁড়ালেন। সে দোকানে ভাত পাওয়া যায়। আমাদের ইচ্ছে হল না খাওয়ার। ম্যাগি বানিয়ে দিতে বললাম। খানিকটা গলে যাওয়া ম্যাগি খেয়ে আমরা আবার রওনা দিলাম। কার্গিল-এর কাছাকাছি এসে বদলে যেতে লাগল আকাশের গাঢ় নীল। এখানে আকাশে আসমানী রং। পাহাড়ি নদীর জল হালকা সবজে। আমরা আসতে আসতে ঢুকে পড়লাম লোকালয়ে। তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামছে। কার্গিল-এ আমাদের লোকাল এলাকা ছাড়া ঘুরে দেখার সেরকম কিছু নেই। ড্রাইভারসাব আমাদের হোটেল দ্য হাইল্যান্ড মাউন্টেন রিসোর্ট এন্ড স্পা-তে নামিয়ে চলে গেলেন। তিনি এমনিই সারা রাস্তায় অন্তত 14 বার বলেছেন কাল সকালে তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে। 9 টার পর যোজিলা পাস-এ ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, খোলে 3 টেয়। আগে না ঢুকে পড়তে পারলে বেকার আটকে যেতে হবে। বুঝেই নিলাম ভোর রাতে বেরোতে হবে আমাদের। কার্গিলের হোটেল-টা বেশ বড়। সামনে লন, সবুজ ঘাসে বসার চেয়ার পাতা, মাঝে ফোয়ারা। আমাদের রুম 3 তলায়। আমরা চেক ইন করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। চা খেতে খেতে ঘুরে দেখলাম চারপাশ। তারপর বেরোলাম কার্গিল-এর রাস্তায়। হোটেল থেকে জেনেছিলাম কাছেই একটা বাজার আছে। হোটেলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুরু নদী। আমরা নদীর ধার ধরে একটু হাঁটলাম। খানিকটা এগোলে নদীর স্রোত চোখে পড়ে। দু-এক জন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বললাম। অনেকটা হাঁটলাম। তারপর একটা ট্রেকার ধরণের ভ্যান-এ চড়ে বাজারে পৌঁছলাম। সেখানে গিয়ে দেখি প্রচুর লোক। হাঁড়িতে রান্না হচ্ছে কোথাও, সসেজ, মাংস সবই আছে। কোথাও সবজি বিক্রি হচ্ছে। বেশিটাই মাটিতে বসে। সবাই সাধারণ খেটে খাওয়া রক্তমাংসের মানুষ। এ অঞ্চলে দোকানপাটও আছে। আমরা কিছুই খেলাম না, শুধু ঘুরে ঘুরে মানুষ দেখলাম। দোকানের সাইন বোর্ড, রাস্তার ঠেলা গাড়ি, অলি-গলি পথ দেখে কার্গিলের জীবনের একটু হলেও ছোঁয়া পেলাম। ঘুরতে ঘুরতে কখন সাড়ে আটটা বেজে গেছে খেয়ালই নেই। সেদিন পূর্ণিমা বা তার আগে পরের কোনও দিন ছিল, চাঁদটা খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তারা ভরা আকাশে। হলদেটে স্ট্রিটলাইটের পিছন থেকে উঁকি দিচ্ছে। একটা বাচ্চা বাবার কোলে খিল খিল করে হাসছে। এক মহিলা বোরখার তলা থেকে হাত বের করে কিনে নিচ্ছেন সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস। মনে হল, আমাদেরই মতো স্বাভাবিক এখানকার মানুষের জীবনও। শুধু কিছু হিংসা আর ভয় সম্পর্কের সুতোগুলো দুদিক থেকে টেনে রেখেছে। বেশি টান লাগলেই ছিঁড়ে যাবার আশঙ্কা। আমরা আবার একটি ট্রেকার ভ্যানে চড়ে হোটেলে ফিরলাম। লনে বসে গল্প করে ডিনার সেরে আজ তাড়াতাড়ি ঘুম। কাল 6 টার আগেই বেরিয়ে পরা জামিন পে জন্নত-এর উদ্দেশে।
আরো কিছু লেখা:
লাদাখ ভ্রমণের প্রথমাংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
লাদাখ ভ্রমণের দ্বিতীয়াংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
লাদাখ ভ্রমণের তৃতীয়াংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
লাদাখ ভ্রমণের চতুর্থাংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
লাদাখ ভ্রমণের পঞ্চমাংশ জানার জন্য click করুন এখানে।
Follow me on Facebook & Instagram.