2017-এর নভেম্বর মাস, আমি চাকরি বদলাচ্ছি। কথাবার্তা প্রায় ফাইনাল। জানতে পারলাম যেখানে জয়েন করছি সেখানে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে হলি ডে! আমার বরের আমেরিকান কোম্পানিতে চিরকালই ঐসময় এক সপ্তাহের ছুটি। আমার ছুটি থাকতে পারার আনন্দেই আমরা কোথাও একটা পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান ছকতে শুরু করি। কিন্তু এই শেষবেলায় না আছে ট্রেন-এর টিকিট, না আছে পকেটে তেমন রেস্ত। ততদিনে অলরেডি বছরের ট্রাভেল বাজেট শেষ। কিন্তু উড়ু মনকে শান্ত করা তো আমাদের ধাতে নেই। আর বাঙালির শেষ বেলায় কেউ না থাকলে দীপু দা আছে। তাই শীতের দুপুরে রোদে পিঠ ডুবিয়ে বরফ ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার নেশাটাই চাগার দিল বেশি। যতই দার্জিলিং-এ তখনও গন্ডগোলের ভয় থাক, পাহাড় ডাকলে না বলতে নেই ভেবেই মনস্থির করে ফেললাম একরকম। আমার জীবনের প্রথম দার্জিলিংটা বাসে ছিল, অনেক ছোটবেলায় পাড়ার উৎসাহী ‘চলুন বেরিয়ে আসি’-দের সঙ্গে। বড় হয়েও ট্রেনের টিকিট না পেয়ে ভলভো-তে শিলিগুড়ি যাওয়া কষ্টের চেয়ে আনন্দই দিয়েছে বেশি। তাই মুহূর্ত নষ্ট না করে আগে বুক করে ফেললাম হোটেল। শেষ মুহূর্তে যোগ দিল আমাদের দুই বন্ধুও। দার্জিলিংয়ের ভুতুড়ে বাড়িতে থাকার অভিজ্ঞতা আগে হয়েছে, কিন্তু বড় গ্রুপ না থাকলে সে সাহসে ভর হয় না। তাই ঘর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাবার ল্যাদে ভর করে বুক করলাম হারমিটেজ রিসোর্ট। ম্যালের পিছন দিকটায় ভিউ পয়েন্টের ঠিক পাশেই। এদিকের হোটেলগুলো থেকে ভ্যালি ও কাঞ্চনজঙ্ঘার ভালো ভিউ। এরপর বাসের টিকিট, রেড বাসে দেখে নিলাম শ্যামলী যাত্রী পরিবহনের একটি বাস আছে যেটায় টয়লেট আছে। আর মাথা না ঘামিয়ে পরদিন সোজা ধর্মতলা, 22 ডিসেম্বর, শুক্রবারের যাওয়ার টিকিট ডান। তারপর বাড়ি এসে প্ল্যানটা ভালো করে ছকে ঠিক হল আমরা অফিস করে শুক্রবার রাতে সোজা ধর্মতলা ছুটব। শনিবার সকালে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং চলে যাব, তারপর 3 দিন ভালো ভালো খাবার, অলি-গলি পায়ে হাঁটা আর শীতকাতুরের বড়দিনের কেক। ফেরার টিকিটও কেটে নেওয়া হল শ্যামলী যাত্রীর ওই বাসেই।
প্ল্যান মাফিক নতুন অফিস থেকে টাইমের আগে বেড়িয়ে উঠে পড়েছিলাম ভলভো-তে। তারপর জয়রাইড। ডিনারে ধাবার কষা মাংস আর রুটি মন ভরিয়ে দিয়েছিল। বাসে চলতে থাকা সিনেমা, জানলার বাইরে কুয়াশার চাদর দেখতে দেখতে চোখ লেগে গেছে কখন খেয়াল হয়নি। ঘুম ভেঙে বুঝলাম আর বেশি দেরি নেই পৌঁছতে। শিলিগুড়ি নামলাম যখন তখন প্রায় 7 টা। শেয়ার ট্যাক্সি নিয়ে তারপর সোজা দার্জিলিং। আমাদের হোটেল যেখানে অতটা গাড়ির প্রবেশ নিষেধ। তারওপর শেয়ার ট্যাক্সি চৌরাস্তার থেকে বেশি যায় না। অগত্যা সেখানে নেমে আরও একটা ট্যাক্সি নিয়ে গেলাম ভানু ভবন পর্যন্ত। সেখান থেকে হাঁটা। এই দিকটা খুব সুন্দর। মিঠে রোদ, ঝরে পড়ে থাকা শুকনো পাতা, খাড়াই উঠে যাওয়া রাস্তা। তখন শরীরে ক্লান্তির রেশমাত্র নেই। উৎসাহে সব চাপা পড়েছে। হারমিটেজ-এর কাছে এসে পিছনের ভ্যালিতে চোখ গেল আগে। কাঞ্চনজঙ্ঘা মেঘের ভিতর। ভ্যালিটা সুন্দর দেখাচ্ছে। একটু মন ভার হল, আগের বার এসে 3 দিনে একবারও তিনি দেখা দেননি কিনা।
হারমিটেজ ব্রিটিশ স্টাইলের হোটেল। দরজা দিয়ে ঢুকে রিসেপশন, সেইটাই টপ ফ্লোর, তারপর ফ্লোরগুলো নিচের দিকে নেমে গেছে, মোট চার তলা। আমাদের ফ্লোর -3। সেখানে রুম-এ চেক ইন করে মানুষ সমান জানলার পর্দা সরিয়ে ভ্যালিতে চোখ দিলাম। দারুন ভিউ। সবুজ পাহাড়গুলো পরিষ্কার দেখা গেলেও কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাওয়ার চান্স দেখলাম না। তখন দুপুর হয়ে আসছে। আমরা স্নান করে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য গ্লেনারিজ। আমরা দুজনের এর আগে 2-3 বার দার্জিলিং এসেছি। মোটামুটি সবই দেখা। আমাদের ম্যালে, আস্তাবলের রাস্তার ভিতর দিয়ে, স্টেশনের পাশ দিয়ে হাঁটতে সব থেকে ভালো লাগে। গ্লেনারিজ-এর ওপরে গিয়ে পছন্দের খাবার অর্ডার করে কাঁচের দেওয়ালের ধার ঘেঁষে বসলাম। বাইরেটা দেখতে এতো ভালোলাগে এখান থেকে মনে হয় আর কোথাও না গেলেও চলে। এখানে এলে যাইই খাই আমার পর্ক কিস আর অর্কর রাম বল বা লেমন পাই-টা বাঁধা। ঢুকে কোনও দিকে না তাকিয়ে এগুলোয় ফোকাস করে বিল পেমেন্ট করে তবে বসি। এই মেঘলা শীতের দুপুরে লাঞ্চের সঙ্গে বিয়ার হলে মন্দ হয় না, হল ও না। পেটপুরে খেতে খেতে ঘুম এল। কিন্তু আমরা ঠিক করলাম একটু ঘুরে তারপর যাব হোটেল। গ্লেনারিজ ক্রিসমাস সাজে সেজে উঠেছে। বাইরেটা লাল-সাদা-সবুজে বেশ লাগছে। বেলুনের শান্তা হওয়ায় হাত নাড়াচ্ছে। আমরা হাঁটতে শুরু করেছিলাম। ম্যালের রাস্তায় নানান মানুষের ভিড় দেখার যে কি আনন্দ তা যে অনুভব করেনি তাকে বোঝানো যায় না। আমার বেশ লাগে এমন উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে লোকজন দেখতে। কোথাও বাচ্চা মায়ের বারণ না শুনে ম্যালে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, কোথাও মহিলাদের দল হাসির ঢল নামছে, কোথাও 10 টাকার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতার দর দাম চলেই যাচ্ছে। এই জীবন্ত দৃশ্যগুলোই দার্জিলিংয়ের প্রাণ। এসব দেখতে দেখতেই আমরা হাঁটতে হাঁটতে বিগ বাজার চত্বর ঘুরে আবার ম্যালের দিকে ফিরতে শুরু করলাম। ম্যালের পিছন দিকে মহাকাল মন্দির ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা হাঁটলে হারমিটেজ। এই পিছনের রাস্তাটা আমার দার্জিলিং ভালোবাসার সবটুকু। এখন দিয়ে যতবার হাঁটি অদ্ভুত ভালো লাগে। অন্ধকার নেমে গেছে, খুব ঠান্ডা লাগছে। কিন্তু এই পথ চলাতেই আনন্দ আগলে হেঁটে চললাম আমরা। হোটেলে ঢোকার আগে ভিউপয়েন্ট-এ এক চা বিক্রেতা মহিলার কাছে চা খেলাম। গরম চেয়ে শীত লাগা একটু হলেও কোমল। রুমে গিয়ে দেখি বিছানা বালিশ সব ভেজা লাগছে। দার্জিলিংয়ের শীত এমনই, ভিজিয়ে দেয়। হিটার চালিয়ে খানিক্ষণ বসার পর হোটেলেই ডিনার সেরে নিলাম।
পরদিন ঘুম ভেঙেছিল তাড়াতাড়ি। উঠেই আমার ফার্স্ট কাজ কাঁচের জানলার পর্দা সরিয়ে তিনি দেখা দিলেন কিনা দেখা। আর তখনই সাদা মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়ল বরফ ঢাকা পাহাড় চূড়ো। পুরো স্লিপিং বুদ্ধা না হলেও অনেকটাই। অর্ককে ডেকে তুললাম। সকালের চা-টা বাইরে খাব ঠিক হল। হারমিটেজ-এর রিসেপশনের বাইরে একটা সিটিং এরিয়া আছে, তার পাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গিয়ে রেলিং ঘেরা ছাদ। সেই ছাদে চেয়ার বা বাঁধানো বসার জায়গায় গা এলিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে চায়ে চুমুক, স্বর্গ তো মুঠোয়। বেশ কিছুক্ষণ সময় এখানে কাটিয়ে হোটেলের প্যাকেজেই ব্রেড, অমলেট, সসেজ সহযোগে ইংলিশ ব্রেসফাস্ট। তারপর তৈরি হয়ে নিয়েছিলাম ভবঘুরে হওয়ার উদ্দেশে। পিছন দিকে রাস্তায় কিছুক্ষণ পায়চারি সেরে ম্যালে এসে চোখ গিয়েছিল প্যারাগ্লাইডিং-এ। পাহাড়ের খাঁজ বেয়ে, গাছের আড়ালে আবডালে উড়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। আমার ইচ্ছে থাকলেও সাহস নেই। সুতরাং চেয়ে দেখাই উপায়। দুদিন পরেই শুরু হবে তিস্তা-মঙ্গন টুরিজিম ফেস্টিভ্যাল। এ সময় স্কুল ছুটির জন্য দার্জিলিং গিজ গিজ করে ভিড়ে। কিন্তু ভিড় অন্যবারের চেয়ে কম ছিল, মানুষের মন থেকে অশান্তির ভয় যায়নি তখনও।
আমাদের রুটিনে খাওয়ার জায়গা বদল ছাড়া বিশেষ বৈচিত্র্য নেই। নিয়মমাফিক গ্লেনারিজে পা-টা ঢুকে যায়। তারপর বড়দিনের গন্ধটাই আলাদা। তবে লাঞ্চ আজ সেখানে নয়। কেক পেস্ট্রি আর গল্প সহযোগে সময় কাটিয়ে আমরা চলে গেলাম ক্লক টাওয়ারের দিকে। তখন দুপুরের রোদ জাঁকিয়ে পড়ছে মুখে। ক্লক টাওয়ারের ডান পাশে উপরের দিকে উঠে যাওয়া রাস্তায় কুঙ্গা রেস্টুরেন্ট। দার্জিলিং রেগুলারদের কাছে খুব পরিচিত নাম। এখানে মোমো আর থুকপা-টা মাস্ট। খানিক্ষণ অপেক্ষার পর জায়গা পেয়ে খাওয়ায় মন দিলাম। জমিয়ে খেয়ে আমরা হেঁটে নেমে গেলাম দার্জিলিং স্টেশনের কাছে। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর সান সেট দেখা। কিছুক্ষণ টয় ট্রেন-এর স্টিম ইঞ্জিনের ধোঁয়া বেরোনো দেখতে দেখতে সাদা শিখরের ওপর লালচে আভা নেমে এল। দূরে মনেস্ট্রির মাথা মায়াবি ঠেকল। সন্ধে নামল পাহাড়ে। স্টেশনে বসেই বিকেলের চা খাওয়া হল। স্টেশন থেকে উপরে ওঠার রাস্তায় বাঁ হাতে ছোট ছোট কটা বেকারি আছে পাশাপাশি। সেখান থেকে কেনা ম্যাকরুন খেতে খেতে আমরা উঠে এলাম মহাকাল মার্কেট পর্যন্ত। মার্কেটের ভিতর দিয়ে অন্য প্রান্তে একটা খাঁড়াই উঁচু রাস্তা আছে, সেটা দিয়ে উঠতে বেশ কষ্ট হলেও, এক্সপ্লোরের আনন্দ আছে।
মেন রাস্তায় এসে আবার খানিকটা নেমে পোস্ট অফিসের উল্টোদিকে JOEYs PUB-এ গিয়ে বসলাম। এই পাবটা দার্জিলিং-এর ঐতিহ্য। ব্রিটিশ কান্ট্রি পাব-এর স্টাইলে তৈরি, দেখতে কটেজের মতো। ভিতরে আলো আঁধারি, বার কাউন্টারের সামনে উঁচু চেয়ার, সামনে কয়েকটা সোফা। হলুদ আলো নেশা লাগা। ভিতরে আরও একটি ঘরে বেঞ্চ পাতা, সেটা স্মোকিং জোন, তবে বসে ড্রিংকও করা যায় চাইলে। এই পাবটির মালিক পুরাণ দোগবা কয়েক বছর হল প্রয়াত। মিউজিকের প্রতি ছিল তাঁর অবাধ টান, নিজে গিটার বাজিয়ে গান শোনাতেন পেগ বানিয়ে সার্ভ করার মাঝে। গানের টানেই পাব-এর ভাবনা। ছেলের নামে পাব-এর নাম। এখন পুরাণ নেই, লাইভ মিউজিকের কিছু শো হয় মাঝে মাঝে। এ ছাড়া আছে ওল্ড স্কুল রেকর্ড। পাব চালান পুরাণের স্ত্রী। রোজ পুরাণের ছবির সামনে রাখেন সাদা গোলাপের তোড়া, পুরাণের প্রিয় ছিল ভীষণ। আন্টি গম্ভীর কিন্তু আলাপ জমে গেলে ভীষণ ভালো। প্রথম দিন লাইম কর্ডিয়াল না থাকায় পরদিন দায়িত্ব নিয়ে কিনে এনে খাইয়েছিলেন, দাম নেন নি লাইম কর্ডিয়াল-এর। এই জায়গাটায় খাবার কিনতে পাওয়া যায় না। ইদানিং পাশের দোকান থেকে মেনু কার্ড আসে, বা পাহাড়ি মহিলা এসে ঘরে তৈরি সসেজ ভাজার অর্ডার নিয়ে যায়। এখানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রাত নামানোর মধ্যে একটা মাদকতা আছে। তারপর কুয়াশার চাদর মোড়া অন্ধকার ম্যালের রাস্তা দিয়ে হোটেলে ফেরা। দূরে পাহাড়ে টিমটিমে আলোর তারা, হওয়ার শব্দ, কনকনিয়ে ওঠা ঠান্ডা সবটাই তখন খুব প্রিয়।
রাত পেরোলে ক্রিসমাস। রাতেই কেক খাওয়া হয়েছিল জমিয়ে। ঘুম থেকে উঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও ঝকঝকে। হোটেল-এ ক্রিসমাস স্পেশাল ফ্রুট কেক সহযোগে ব্রেকফাস্ট করে আবার রেডি হয়ে বেরিয়ে পরা। ম্যালে এসে আস্তাবলের দিকের রাস্তায় ঢুকে পড়লাম। এখান থেকেও সুন্দর ভ্যালি দেখা যায়। রাস্তাটা খাঁড়াই উপরের দিকে উঠে গেছে। এ রাস্তাতেই কিছু হিডেন জেম ফুড জয়েন্ট আছে। একটু ঢুকেই একটা আন্ডার কনস্ট্রাকশন হোটেলের নিচের ফ্লোরে মোমোর পসরা সাজিয়ে এক মহিলাকে দেখলাম। বেশ ভিড় সামনেটায়। আমরা টেস্ট কোরতে এগিয়ে গিয়ে তিন-চার প্লেট নামিয়ে ফেললাম। এখান থেকে সোজা উঠে গেল সোনাম কিচেন, খুব ভালো ব্রেকফাস্ট পাওয়া যায়। আমরা রাস্তা ধরে চলতে লাগলাম। মোমো খেয়ে পেট ভরে গেছে, তাই আর সোনম-এ ঢোকা হল না। বরং রাস্তাটা তখন দারুন ইন্টারেস্টিং লাগছে। আগে কখনও হাঁটিনি এখানে। এ গলি সে গলি করে আমরা অনেকটা হাঁটলাম। তারপর লোকজনকে জিগেস করে ক্লক টাওয়ারের দিকের রাস্তা জেনে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেরিয়ে এলাম। অনেক হাঁটা হয়েছে, বসার জন্য তো আছেই আমাদের গ্লেনারিজ। কেভেন্টার্স-এর খাবার আমার তেমন ভালো লাগে না। তাই সেখানে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। গ্লেনারিজে এমনিই বড়দিনের আমেজ। চেয়ার টেবিল লাল সাদায় মোড়া। আমরা স্যান্ডউইচ খেলাম রোদে পিঠ দিয়ে বসে। এখন থেকে বেরিয়ে ম্যাল, ক্রিসমাস উপলক্ষে গান বাজনা হচ্ছে। মাঝখানে বাধা হচ্ছে পর্যটন উৎসবের স্টেজ। সেজে উঠছে নানান রকম স্টল। আমরা হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম চৌরাস্তা পেরিয়ে নীচে নেমে বাজারের দিকে। তখন সন্ধে নামব নামব করছে, পাওয়ার কাট-এর জেরে সব অন্ধকার। রাস্তায় মুদির দোকান, বাজারের পাশে জ্যাকেট সোয়েটারেরও পসরা। ইমার্জেন্সি আলো জ্বালিয়ে চলছে বিকি কিনি। একটি বহু পুরনো চায়ের দোকানে গিয়ে গন্ধ শুঁকে নানা ধরণের চায়ের মধ্যে থেকে বেছে চা নেওয়া হল। বাড়ি এসে টেস্ট করে দেখেছি সে চা নাথমূলের থেকে অনেক ভালো। হোটেল ফিরে ডিনার করার আগের একবার JOEYs -এ যাওয়া মাস্ট। সেখানে গান, আড্ডায় রাত বেড়ে চলল। শুনশান পথ দিয়ে যখন হোটেলে ফিরলাম তখন সব নিজ্ঝুম।
পরদিন সকাল সকাল বেরোনো। কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ সমস্ত শৃঙ্গ সাতসকাল থেকেই দৃশ্যমান। যেন বলছে, ‘কিছুখণ আরও না হয় রহিতে কাছে’! কিন্তু সে তো সম্ভব না! ফিরব বলেই তো যাওয়া। হোটেলের ছাদে বসে প্রানভরে দেখলাম সবুজ ভ্যালি ছাড়িয়ে ঝকঝকে নীল আকাশের উপর বরফ ঢাকা পাহাড় চূড়ো। জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখে একবার শেষ বারের মতো হাঁটতে গেলাম ম্যালে। অনেক লোক, স্টেজ, স্টলগুলো একদম রেডি। বেলভিউ হোটেল-এর সামনে আই লাভ দার্জিলিং-এর ইনস্টলেশন। পুরো উৎসবের সাজ। আমরা হোটেলে ফিরে ব্যাগপত্তর নিয়ে ভানু ভবনের দিকে হাঁটা লাগলাম। খাঁড়াই উৎরাই রাস্তা দিয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে চলতে চলতে মনে মনে বললাম, ‘ইয়েস, আই লাভ ইউ দার্জিলিং।’