তুমিলিঙে একরাত কাটিয়ে অসাধারণ সূর্যোদয় দেখে আমাদের মন আনন্দে ডগমগ। সাতসকালে ভ্যাগাবন্ড হেঁটে বেড়ানো পর্ব সেরে খেয়াল হল আসল থ্রিল এখনও বাকি! ব্রেকফাস্ট করে আমাদের গৈরিবাসের দিকে রওনা দেওয়ার কথা। তাই আর সময় নষ্ট না করে চলে গেলাম রুম-এ। গোছগাছ করে নেমেই দেখলাম আমাদের ল্যান্ড রোভার হাজির। ঘড়িতে 9 টা, আর কাঞ্চনজঙ্ঘার বেশ কিছুটা ঢেকে গেছে ইতিমধ্যেই। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোর গায়ের বরফ গলে জল হচ্ছে তখন। আমরা খেয়ে নিয়ে উঠে পড়লাম গাড়িতে। আঁকা-বাঁকা রাস্তা পেরিয়ে আবার চলতে শুরু করল গাড়ি। একটু এগিয়ে যে বাঁকটা পেরোলে ভোরবেলা কোন থেকে দেখা থ্রি সিস্টার্স সামনে আসার কথা, তা এতক্ষণে মেঘের আড়ালে। অগত্যা মেঘ দেখতে দেখতেই চললাম।
গৈরিবাস পর্যন্ত রাস্তা কংক্রিটের। তারপর আরও ভাঙাচোরা, বোল্ডার পথ। গৈরিবাসে এসে ড্রাইভাররা একটু এনার্জি স্টোর করে নেন। সেখান থেকে রাস্তাটা প্রায় লম্বালম্বি যেন উঠে গেছে ওপরে। 3600 মিটারেরও বেশি উচ্চতায় উঠে সান্দাকফু পৌঁছব। এখানে চা ব্রেক নিয়ে আবার গাড়ির ভিতর সেঁধিয়ের গেলাম। খুব হাওয়া, আরও অনেক বেশি ঠান্ডা থাকার ভয় আর এডভেঞ্চারের উত্তেজনায় শুরু হল যাত্রা। এখানে ওখানে রাস্তায় বোল্ডার, খানা-খন্দ। মাঝে একটু ভালো রাস্তা তো আবার অনেকটা মাটি-পাথরের পথ। রাস্তা আরও বেশি খাঁড়াই। কোথাও কোথাও মনে হচ্ছে 90 ডিগ্রি এঙ্গেল-এ গাড়ি যাচ্ছে। ভিডিও তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে দুবার হাত থেকে ফোন পড়েছে! পিছনের ব্যাগ সুটকেট গুলো যেন পার্সোনিফায়েড হয়ে গেছে। এই দাঁড়াচ্ছে, এই শুয়ে পড়ছে, এই গড়িয়ে যাচ্ছে পিছনে, এই সোজা দাঁড়িয়ে পরে সামনে এগিয়ে আসছে। সে এক মজার দৃশ্য! রাস্তা এতটাই খারাপ, নিজেদের মধ্যেও ঠোকাঠুকি লেগে যাচ্ছে মাঝে মাঝে! সামনে রাস্তায় জায়গায় জায়গায় বরফ জমে আছে। পাহাড়ি ঝোরার প্রায় পুরোটাই বরফ। দুদিকে প্রচুর রডোডেনড্রোন গাছ, এখন ফুল নেই, কিন্তু ডালপালা মেলে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আরও খানিক চলার পর একটা সুন্দর রাস্তায় ঢুকে পড়লাম। আলো বাতাস এখানে কম ঢোকে। তাই রাস্তা, গাছ, ঝোপের ফ্রস্ট গলেনি তখনও। এমনকি 10 দিন আগে পরা বরফও কিছু কিছু জায়গায় জমা হয়ে আছে। এমনিই ওয়েদার খারাপ হওয়ায় রোদ নেই, এ রাস্তাটায় যেন একটা রূপকথার জগতের মধ্যে ঢুকে পরার মতো অনুভূতি হচ্ছে। যেন কোনও অচেনা রাজার রাজত্বে ঢুকে পড়েছি। গাছগুলো বরফ মেখে দাঁড়িয়ে আছে, ছোট ছোট ঝোপে বেগুনি ফল বরফে সাদা, এই যেন মনে হল একটা রেড পান্ডা এক গাছ থেকে অন্য গাছে চলে গেল চোখের নিমেষে। দু-একটা পাহাড়ি লোমশ গরু পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে চড়ছে। রাস্তায় চাকার দাগের দুপাশে লম্বা বরফের রেখা চলে গেছে যতদূর চোখ যায়।
এভাবে খানিক যাবার পর আমরা কালাপোখরি পৌঁছে গেলাম। কালো জলের লেক, জলের মাঝে মাঝে জমে বরফ। হু হু হওয়ায় লেকের ধারের পতাকা উড়ছে। গাড়ি থেকে নেমে কেঁপে গেলাম। দূরে একটা মোনাস্ট্রি। রাস্তা লেকের পাশ দিয়ে ওপরে উঠে বেরিয়ে গেছে নেপালের ওপর দিয়ে। এখানে নেপালি পুলিশের চেক পয়েন্ট। সেখানে নাম ধাম বলে আবার চলতে শুরু করলাম আমরা। সরু রাস্তা, এক দিকে নীল আকাশ দেখা দিল। ভাবলাম ওপরে বুঝি আকাশ পরিষ্কার। গর্ত, বোল্ডার, সোজা উঠে যাওয়া রাস্তার ধারে ধারে না গলা পুরনো বরফ দেখতে দেখতে চলেছি। মাঝে মাঝে ট্রেকার্সদের দল দেখছি পাথরের গায়ে ঠেস দিয়ে বসে জিরিয়ে নিচ্ছে, বা হাতের লাঠিতে ভর দিয়ে খাঁড়াই চড়ছে। মাঝে মাঝে রাস্তা এত সরু রীতিমতো ভয় করছে। আর পোক্ত ড্রাইভারের এক হাতে নির্দ্বিধায় গাড়ি চালানোর ভঙ্গি অবাক করছে প্রতি মুহূর্তে।
খানিক পর আমরা মাথা উঁচু করে সোজা উপরে শেরপা চ্যালেট-এর দেখা পেলাম। সোজা খাঁড়াই পথে এখানকার ড্রাইভাররা কীভাবে গাড়ি চালায় সেই ভাবতে ভাবতে আমরা তরতর করে উঠে গেলাম সান্দাকফুর মাথায়। এখানে খাপছাড়া নীল আকাশ থাকলেও এভারেস্ট, থ্রি সিস্টার্স, কাঞ্চনজঙ্ঘা কারও দেখা নেই। সানরাইজার হোটেলের সামনে পুরোন বরফ জমে। সাবধানে পা ফেলে ভিতরে গেলাম মালপত্তর নামিয়ে। আমাদের ভিউ রুম, দোতলায়। সে রুমের দুটো দেওয়াল কাঁচের জানলা, সোজা তাকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা, বাঁদিকে এভারেস্ট দেখা যাবে। এখন সবই মেঘের ভিতর। ঘর ভালো, পরিষ্কার। কিন্তু বাথরুমের কলে জল পরে না। বালতি করে কনকনে জল দিয়ে যাবে, মেপে ব্যবহার করতে হবে। তেমনই নিয়ম এখানে। মালপত্তর ওপরে রেখে আমাদের ড্রাইভারের সঙ্গে ছাদ টা দেখতে গেলাম। এখান থেকেই সবাই সকালে সানরাইজ দেখে। অন্য হোটেলের কেউ দেখতে এলে কিন্তু চার্জ দিয়ে উঠতে হয়, পরিষ্কার লেখা আছে রিসেপশন-এ। সব মেঘে ঢাকা দেখে আমার মন খারাপ, ড্রাইভার আশ্বাস দিল সকালে দেখা দেবে। রিসেপশনে নেমে এসে ব্ল্যাকবোর্ড-এ লেখা মেনু দেখে ভাবলাম ওয়াই ওয়াই খাওয়াটাই ঠিক ডিসিশন হবে। তেমনই অর্ডার হল। এত উঁচুতে হওয়ায় কাঁচামাল ও খাবার দাবার আনা বেশ সমস্যার। তাই দাম বেশ চড়া। 1 টা ডিম সেদ্ধ 30 টাকা, এক কাপ দুধ চা-ও। এখানেও অনেক ট্রেকার্স। তাঁদের নিচের দিকে থাকার জায়গা হলেও সানরাইজ-এ চা, খাবার দাবার-এর ব্যবস্থা। এ চত্বরে সানরাইজ টাই সেরা হোটেল। ভিউ এবং ব্যবস্থাপনা দুটোই ভালো। আগে শেরপা চ্যালেট-এর পাশে এদের পুরোন বিল্ডিং-টাই শুধু ছিল, কিন্তু নতুন দোতলা বিল্ডিং হবার পর সানরাইজ হোটেলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
রিসেপশনে টেবিলের ওপর রাখা লিকার ও দুধ চা-এর আলাদা কন্টেনার। সেখান থেকে চা নিয়ে খেতে হয়। রিসেপশনে শুধু জানিয়ে দিতে হয় কটা চা। আমরা চা খেতে খেতে ওয়াই ওয়াই এসে গেল। ওই দিয়েই লাঞ্চ সারলাম। বাইরেটা বেরিয়ে দেখলাম আকাশের অবস্থা খারাপ বই ভালো না। তখনও মনে আশা, তুমলিং-এও তো দিনে মেঘ ছিল। এখানে আশপাশে হেঁটে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। নতুন আলাপ হওয়া মানুষজনদের সঙ্গে খানিক গল্প সেরে রুমে গিয়ে ঘুম দিলাম দুজনে। ঠান্ডার চোটে ঘুমও ঠিকঠাক হল না। সন্ধের সময় রিসেপশনে নেমে দেখি পোড়া কয়লার তাপ নেওয়ার খুব ভিড়। এসব জায়গায় ট্রেকার্সদের দলই সব আগলে বসে থাকে। তারা উঠলে তবে চান্স। অন্যদিকে সরাসরি উনুন থেকে তাপ নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। শেখানেই গিয়ে বসলাম। বাইরে তাপমাত্রা মাইনাস 3। কিন্তু খুব মেঘ আর হাড় কাঁপানো হওয়া। তারা দেখা যাচ্ছে মাঝে সাঝে, তবে একটা দুটো। অনেকেই ভাবছে এত কষ্ট করে আসাই সার। আবহাওয়া এত খারাপ হয়ে যাবে কে তা জানতো!
রাতেও থুকপা আর ওয়াই ওয়াই-ই নিয়েছিলাম ডিনার-এ। এত ঠান্ডা খেতে ইচ্ছেই করেনি। কোনওরকম হিটার-এর ব্যবস্থা না থাকায় রুম ভীষণ ঠান্ডা। দুদিকে কাঁচ থাকায় রীতিমতো হাড় হিম হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। জোলো আবহাওয়ায় বিছানা চাদর সবই ভেজা ভেজা। একান্তই ঠান্ডায় থাকতে না পারলে রুম-এ ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া দিয়ে স্টোভ নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু চাদর কম্বল এসব নিয়ে ঘরে স্টোভ জ্বালিয়ে ঘুমোনোর সাহস আমাদের হয়নি। অনেক কষ্টে ঘুম এলেও বার বার ভেঙে গেছে। এভারেস্ট দেখা যে হবে না তা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল রাতের আকাশ দেখেই, তাও ভোরে উঠে পর্দা সরিয়ে দেখার বৃথা চেষ্টা করেছি। কাঁচের এদিক-ওদিক দুদিকেই তখন বরফের আস্তরণ। কিছু দেখা যাচ্ছে না। কনকনে ঠান্ডায় ছাদে গিয়েছিলাম তাও। কুয়াশা আর মেঘের চাদর ছাড়া কিছুই দেখিনি। একজন টুরিস্ট শুধু বলেছিলেন একবার বেরিয়েই আবার ঢুকে পড়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। সে মাহেন্দ্রক্ষণ দেখার সৌভাগ্য ও আমাদের কারও হয়নি। আবার রুমে এসে লেপের ভিতর ঢুকে পড়েছিলাম।
ফেরার পথে কুয়াশার চাদর। বড় বড় রোডডেনড্রোন ডাল-পালা মেলে যেন কুয়াশাকে জড়িয়ে আছে। মেঘ নেমে আসছে হু হু করে। সামনে বেশি দূর দেখা যায় না। আশেপাশের গাছ, ঝোপ, রাস্তা ফ্রস্ট-এ ঢেকে আছে। কোথাও কোথাও জমে রয়েছে থোকা থোকা বরফ। থেকে থেকে দু একটা বরফের কনা আকাশ থেকে গাড়ির কাঁচে পরে জল হয়ে যাচ্ছে। আমরা এগোচ্ছি যেন ছায়াপথ ধরে। চারিদিক ধূসর, মনকেমন করা। এ দৃশ্য মনে রেখে দেওয়ার মতো। কালাপোখড়ির জল দেখলাম পুরো জমে বরফ। গাড়ির ঝাঁকুনিতে কাঁচের জানলা বার বার খুলে যাচ্ছে আর হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে পড়ছে ভিতরে। কখনো ধূসর কেটে একটু সবুজ বেরোচ্ছে। আবার তার মধ্যেও বরফের কণা নেমে আসছে গোটা-দুয়েক। এমন পজ দিয়ে দিয়ে বরফ পড়া দেখিনি। যেন ঝেঁপে আসার আগে ট্রায়াল রান চলছে! উপর থেকে নেমে আসা জল রেখা বরাবর জমে আছে বিভিন্ন জায়গায়। রাস্তায় খন্দে পরা জলও বরফ। আমাদের তুমলিং-এ আলাপ হওয়া ট্রেকার্স দল তখন সান্দাকফু উঠছে। তাদের বরফ পড়ার সুখবর দেওয়াতেই তখন আনন্দ।
সাত টা নাগাদ যখন ঘুম ভেঙে নীচে নামলাম তখন ট্রেকার্স-দেরও মন খারাপ। এত কষ্ট করে আসা তো দেখা পাওয়ার জন্যই। সবার গলাতেই আক্ষেপ। আমার তখন খুব রাগ হচ্ছে। আর এই জায়গায় থাকতে একদম ইচ্ছে করছে না। দরজা ঠেলে বাইরে আসতেই হওয়ার চোটে উড়ে যাব মনে হল। এভারেস্ট-এর দিকটায় এক ফালি আকাশি ছাড়া সব ধূসর। গাছগুলোর ফ্রস্ট ভর্তি। পা পিছলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। আমি প্রকৃতির ওপর আরও খানিক রাগ করে আবার ভিতরে চলে এলাম। রিসেপশনে কথা বলে জানলাম, বরফ না পড়লে এ আবহাওয়ার বদল হবে না। আর আশঙ্কার কথা হল, গাড়ি ওপরে আসার আগে যদি বরফ পড়া শুরু হয় তাহলে গাড়ি আসবে না! আমাদের গাড়িকে সাড়ে আট টা থেকে ন’টার মধ্যে আসতে বলা। অর্ক তখন চাপ নিয়ে নিয়েছি অলরেডি। থাকতেই চায় না আর এখানে ওর এত ঠান্ডা লাগছে। সাড়ে আট টা থেকে কিছু গাড়ি আসতে শুরু করল। কিন্তু আমাদের টার দেখা নেই। বরফ পড়া শুরু হল সান্দাকফু-তে। ঝিরঝিরে বরফ জ্যাকেট টুপিতে পরতে শুরু হতেই গাড়ি এসে গেল। তখন বরফ-এর আনন্দ নেওয়ার থেকে নামতে পারার উদ্বেগ বেশি। অর্ক, ড্রাইভার কেউই দাঁড়াতে দিল না আর। গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম আমরা।
গৈরিবাস এসে আবার গাড়িগুলো পর পর জমা হল। চা, আলুরদম, মোমো খেলাম নেপালি দোকানে। তারপর তুমলিং, মেঘমা, চিত্রে হয়ে নেমে চললাম দ্রুত। কখনও নীচে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ, উপরে আকাশে নীলের উঁকি। কখনও নীচে সবুজ পাইনের সারি, উপরে মেঘের দল, এই দেখতে দেখতে মেঘলা দুপুর নামার সময় আমরা পৌঁছে গেলাম মানেভঞ্জন। শেষ হল দুঃসাহসিক অভিযান, কিছু পাওয়া কিছু না পাওয়ার গল্প নিয়ে।
খুঁটি-নাটি তথ্য-
বাগডোগরা/এনজেপি স্টেশন থেকে সরাসরি মানেভঞ্জন-এর গাড়ির বুকিং পাওয়া যায় খরচ ₹3000-3500
দার্জিলিং থেকে গেলে মানেভঞ্জন-এর শেয়ার ক্যাব বা গাড়ি বুক করে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে
শেয়ার ক্যাব- জন প্রতি ₹80
বুকড ক্যাব- ₹1500 (আনুমানিক)
ল্যান্ড রোভার বুকিং
আগে থেকে বুকিং-এর ব্যবস্থা নেই (ফিক্সড রেট)
এসোসিয়েশন-এর অফিস থেকে বুকিং- তুমলিং 1 রাত, সান্দাকফু 1 রাত ধরে ₹5800
সিংগালীলা ন্যাশনাল পার্ক-এ ঢোকার খরচ- জনপ্রতি ₹100
হোটেল
সিদ্ধার্থ লজ (তুমলিং) ডবল বেডরুম এটাচ বাথরুম-সহ ₹1200/রাত
খাওয়ার খরচ আলাদা
নম্বর- +919593320408
সানরাইজ হোটেল (সান্দাকফু) ডবল বেড ভিউ রুম এটাচ বাথরুম-সহ ₹2500/রাত
খাওয়ার খরচ আলাদা
নম্বর- 09775813774
হোটেল বুকিং-এর জন্য যোগাযোগঃ
ট্রাভেল ড্রিমস-
ই-মেল- mail@traveldreams.in
মোবাইল- +917044785512