গত বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের বেড়ানোর প্ল্যানে দার্জিলিং ও আনুসাঙ্গিক এলাকার সঙ্গে জুড়ে নিয়েছিলাম সান্দাকফু। আঁকাবাঁকা পথ, লজঝড়ে ল্যান্ড রোভার, হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডাকে সঙ্গী করে দুদিনের অভিযানের ছক কষেছিলাম দুজনে, আমি আর অর্ক। কনকনে ঠান্ডায় বরফ দেখার খুব শখ ছিল মনে। ঠান্ডার চোটে ইমাজিনেশন বনাম রিয়ালিটি বলে যে সব মিম দেখি আজকাল ফেসবুক-এ, তেমন একটা ডোজ হয়েছিল দুজনেরই। কিন্তু ওমন ঠান্ডাতেও থ্রিল কিছু কম হয়নি।
প্রাথমিক থ্রিলের শুরু যাওয়ার আগেই। হোটেল বুক করতে গিয়ে। আমাদের প্ল্যান ছিল মানেভঞ্জনে গিয়ে ল্যান্ড রোভার নেব। একদিন তুমলিং-এ থেকে পরদিন সান্দাকফু। সান্দাকফুতে এক রাত্তির থেকে পরদিন নেমে আসব মানেভঞ্জন। যেহেতু নিজেরা যাচ্ছি, গুগল-এ ব্লগ আর দার্জিলিং টুরিজম-এর তথ্যের ভিত্তিতে খুঁজে পাওয়া হোটেল-এ ফোন করেই বুক করার প্ল্যান। এমনিতেই ওসব জায়গায় অপশন কম। সান্দাকফুতে শেরপা চ্যালেট-এর নাম সবার জানা। সানরাইজ হোটেলও হালে বেশ পপুলার। কিন্তু খুঁজে বের করা নম্বরে যতবার ফোন করি কিছুতেই কানেকশন পাই না। পেলেও কেউ ফোন তোলে না। এমনকি নেপালের নম্বরগুলো ট্রাই করেও লাভ হচ্ছে না। একদিন শেরপা চ্যালেট-এর ফোন লাগল, যিনি ধরলেন বললেন অন্য একটা নাম্বার দিচ্ছেন সেটায় বলে দিলেই বুকিং হয়ে যাবে। কিন্তু সে নম্বর ও লাগল না কখনোই। সান্দাকফু ছেড়ে তুমলিং-এ যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। তুমলিং-এ শিখর লজ, সিদ্ধার্থ লজ-এর নামই আসে থাকার জায়গা খুঁজলে। সে দুটোতেই ফোন করে সিদ্ধার্থ-এ যোগাযোগ সম্ভব হল। সেখানে বুকিং নিলেও তারা সান্দাকফুর বুকিং করতে পারবে না সাফ জানিয়ে দিয়ে আবার আগে ট্রাই করা নম্বর গুলোই দিলেন। তারপর শিখর লজ থেকে পাওয়া গেল Travel Dreams-এর নম্বর। এই সংস্থা দু’জায়গার বুকিং-ই করে দেবে জেনে অবশেষে নিশ্চিন্ত হলাম। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে শিখর লজ ও সানরাইজ হোটেল-এ নির্দিষ্ট দিনে বুকিং পেয়ে গেলাম।
আমাদের সান্দাকফু যাত্রা শুরু হয়েছিল দার্জিলিং থেকে। দার্জিলিংয়ে মেইন ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পেরিয়ে নিচে বাজারের দিকে নেমে গেলে ওখান থেকে মানেভঞ্জনের শেয়ার ট্যাক্সি ছাড়ে। বেশি বেলা হয়ে গেলে আবার তা পাওয়া মুশকিল। তাই আমরা 11 টার মধ্যেই ওখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম। সকালে তাকদা থেকে এসে বাইক জমা করে আসায় 11 টা বাজিয়েছিলাম, না হলে আরও তাড়াতাড়ি শুরু করাই বেটার। মানেভঞ্জনের ট্যাক্সি না পেলে সুকিয়াপোখরি গিয়ে আবার শেয়ার ট্যাক্সির খোঁজ করতে হয়। আমরা নেমে দেখলাম একটা ট্যাক্সি ছাড়ার তোড়জোড় করছে, পিছনে দুটো সিট আছে, নিজেদের লাক-কে বাহবা দিয়ে বাছবিচারের ধার না ধেরে উঠে পড়লাম পিছনেই। সকাল থেকে কফি ছাড়া পেটে পড়েনি কিছুই। সামনের দোকান থেকে লোকাল কুকিজ, ম্যাকরুন সঙ্গে নিয়ে নিলাম। পিছনের সিট থেকে রাস্তা দেখতে দেখতে চলতে তখন বেশ লাগছে। পাহাড়ি রাস্তার ওপর আমার চিরকালের টান। কদিন বাইকে চড়ে আশ মিটিয়ে রাস্তা দেখে নিয়েছি ভেবেছিলাম কিন্তু এ রাস্তার নেশা কাটার না! পাইনের সারি, দূরে পাহাড়, টিনটেড গ্লাস থেকে দেখা অন্য রঙের আকাশ, পিছনে সরে সরে যাওয়া রাস্তা দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম মানেভঞ্জন। মানেভঞ্জন বেশ ঘিঞ্জি। প্রচুর গাড়ি, ট্যুরিস্ট-এর ভিড়। দেখে বুঝলাম প্রচুর লোক যাচ্ছে সান্দাকফু সিঙ্গালীলার দিকে। আমরা গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে প্রথমেই ল্যান্ড রোভারের খোঁজে চলে গেলাম এসোসিয়েশন-এর অফিসে। এখান থেকেই প্ল্যান অনুযায়ী গাড়ি বুক করে নেওয়ার ব্যবস্থা। যাঁরা ট্রেক করেন তাঁরা হাইল্যান্ডার গাইড এন্ড পোর্টার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন-এর অফিস থেকেই গাইড নিয়ে নিতে পারেন। আর ট্যুর অপারেটর-এর থেকে ট্রেকিং-এর প্যাকেজ নিলে সাধারণত তারাই বুক করে দেন গাইড। আমরা গিয়ে প্রথমেই বলে দিলাম ল্যান্ড রোভার চাই। কাউন্টার থেকে বলে সে গাড়ি নেই, বোলেরো-এ যেতে নয়তো 2 ঘন্টা অপেক্ষা করতে। অর্কও নাছোড়বান্দা, সে ‘ল্যান্ড অফ ল্যান্ড রোভার’-এ ল্যান্ড রোভার চড়বেই। প্রয়োজনে বসে থাকবে 2 ঘণ্টা। ওর যে এভারেস্ট দেখার চেয়ে ল্যান্ড রোভার চড়ার তাগিদ বেশি তা আমি বাড়িতেই ওর রিসার্চ আর ভিডিও দেখানোর উচ্ছাসেই বুঝে গেছি। আর হবে নাই বা কেন, একে 70 বছরের পুরনো ঐতিহ্য, তারপর 2017- ল্যান্ড রোভার কোম্পানির তরফ থেকে স্বীকৃতি ও সেলিব্রেশন- সে ঐতিহ্যকে উপভোগ করার লোভ থোড়াই ছাড়া যায়! অর্ক-র জেদ দেখে অবশেষে এক ল্যান্ড রোভার ড্রাইভারই এগিয়ে এসে বললেন তিনি যেতে রাজি। আমরাও হাসি মুখে বুকিং সেরে গাড়িতে চড়ে বসলাম। শুধু দুজনে থাকায় ড্রাইভারের পাশেই বসে গেলাম। আর পিছনে উঠে গেল মালপত্তর।
গাড়ি একটু এগিয়ে এসে দাঁড়ালো সান্দাকফু ঢোকার রাস্তার গেট-এর মুখে। সেখানে দুজনের আই ডি কার্ড দেখিয়ে এন্ট্রি ফি (জন প্রতি 100 টাকা) দেওয়ার পর রাস্তা খুলে গেল। 32 কিমি দূরত্ব সান্দাকফুর। আমাদের এদিনের গন্তব্য তুমলিং 11 কিমিতেই। গাড়ি একটু এগোতেই দুদিকে সবুজ। পাইনের গাছ পাশে রেখে চলছে ইতিহাসের সাক্ষী। খানিক পর রাস্তা নিজের রূপ দেখাতে শুরু করল। এই উঠে গেছে খাঁড়াই সোজা পথ, তো এই ভীষণ বাঁক। রাস্তা বাঁধানোই, তবে এতো সরু উল্টোদিকের গাড়িকে পাস দিতে হলে গাড়ির অনেকটা অংশই রাস্তার বাইরে বেরিয়ে থাকছে! বাঁকের মুখে পাস দেওয়ার সময় অবস্থা আরও সঙ্গিন। এগিয়ে পিছিয়ে নিজেদের সুবিধামতো পজিশনে গিয়ে ড্রাইভাররা পাস দিচ্ছেন। একটা গাড়িকে সেভাবেই পাস দিয়ে আমাদের গাড়ি দুদিকে বড় বড় গাছের ফাঁক দিকে চলতে লাগল সগর্বে। খানিকটা যাওয়ার পর আবার একদিকে গাছ, অন্যদিকে নেমে গেছে ঢাল। দূরে পাহাড় ঝক ঝক করছে। আবার কোথা থেকে মেঘের দল এসে ঢেকে দিচ্ছে দৃশ্যপট। গাড়িটা সোজা খাঁড়াই উঠে গিয়ে রাস্তা ছাড়িয়ে ঘাস জমির উপর হুড়হুড় করে উঠে গেল হঠাৎ। পাশে নিচের পাহাড়ের ঢালে চিত্রে মোনাস্ট্রি। আর যে ঘাস জমিতে গাড়ি টা আমাদের নামালো সেটাই চিত্রে ভিউ পয়েন্ট। দূরে পাহাড়ের ভ্যালি ক্রমে ঝাপসা হয়ে আসছে তখন। পাহাড়ের গায়ে গায়ে মেঘ লেগে আছে। আবহাওয়া খারাপের দিকে। মনেও সে মেঘ ঢুকে পড়ছে টুক টাক। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট্ট রেস্টুরেন্ট কাম থাকার জায়গায় ঢুকলাম চা খেতে। এখানে কাঠের রঙিন জানলার পর্দা সরিয়ে উঁকি দিলে পাহাড়ি ছবি। মোনাস্ট্রির মাথাটার চারপাশে পতাকাগুলো পতপত করছে হাওয়ায়। চা না বলে গরম গরম ওয়াই ওয়াই অর্ডার করলাম। জানলার ধারের সিট দেখে বসা হল। বাইরেটা মেগ রোদের খেলায় বেশ মনোরম। এখানে টেকার্স রয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পিয়াঁজ ছাড়িয়ে, টমেটো কেটে রান্নার জোগাড়ে সাহায্য করছে। পাহাড়ি ঠান্ডায় ওয়াই ওয়াই-এর মতো ভালো খাবার আর কিছু লাগে না! আমরা ধোঁয়া ওঠা ওয়াই ওয়াই খেয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম।
চিত্রের মাঠের মতো খোলা জায়গাটার একপাশের ঢিবিতে অনেক দাঁড়কাক, তারস্বরে নিজেদের মধ্যে তর্ক করছে। পাশ দিয়ে ট্রেকিং-এর পথ চলে গেছে। মূল গাড়ি চলার রাস্তাটায় হেয়ার পিন বাঁক। গাড়ি সোজা এসে সে রাস্তায় নামলো। তারপর আবার আঁকা-বাঁকা পথ। আর একটু এগোনোর পর রাস্তাটা আরও খানিক বদলে গেল। এদিকটা বেশ খাঁড়াই। দুদিকেই পাহাড়ের ঢাল নেমে গেছে নীচে, রাস্তার দুদিকটা বাঁধানো। ড্রাইভার জানালো, মসম খারাপ, না হলে এখানেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। মেঘের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে এসে পড়লাম মেঘমা। তারপর টংলু হয়ে সুন্দর বাঁধানো পথ খাঁড়াই উঠে গেছে। সে দৃশ্য অপূর্ব। সোজা উঠে সে পথ আবার নেমে গেছে নীচে। দুদিকেই ভিউ। আর এই অসাধারণ ছবি আঁকা জায়গাটাই তুমলিং। গাড়ি এসে যেখানে নামালো সেখানে পাশাপাশি লজগুলো সাজানো একদিকে। অন্যদিকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আমরা সাদা মেঘ পেলাম একগুচ্ছ।
গাড়ি থেকে নেমেই বুজলাম ব্যাপক ঠান্ডা। মালপত্তর নামিয়ে ঢুকলাম হোটেলে। সে জায়গা জমজমাট ট্রেকার্সদের ভিড়ে। একটু অপেক্ষা করে পাশেই ওদের আনেক্স বিল্ডিং-এ জায়গা হল। খুবই বেসিক এমেনিটি। এমন পাহাড়ি জায়গায় যা হয়। ছোট্ট কাঠের ঘর, দুটো বেড দুদিকে, আর একটা বাথরুম। খুঁতখুঁতে আমার পক্ষে এ সব জায়গায় থাকা একটু কষ্টকর, কিন্তু বেড়ানোর টানে কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি এলে সামলে নিতে হয় বইকি! ঠান্ডা এড়াতে আরও সোয়েটার জ্যাকেট চাপিয়ে বাইরে এলাম। মেঘ ক্রমে বাড়ছে তখন। বিকেল নামছে। গুগল-এর ওপর খুব রাগ হল ওয়েদার রিপোর্ট-এর জন্য। এ রাস্তাটা অপূর্ব। কিছু না দেখতে পেয়েও পথটা দেখার একটা মজা আছে। অনেক বাঙালি এসেছেন একই লক্ষ্য নিয়ে। আলাপও হল। সূর্যাস্ত দেখার পুরো পরিকল্পনাটাই ভেস্তে দিয়ে মেঘের মধ্যেই অন্ধকার নেমে এল ক্রমে। শুধু কাঁটা গাছের ফাঁক দিয়ে আলতো ছায়ার মতো উঁকি দিয়েই ঝাঁপ বন্ধ করল সূর্যদেব।
আমরা ঠান্ডা এড়াতে রুমে গেলাম। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। লেপ কম্বল একসাথে নিয়েও কোনও লাভ নেই। বিছানাই ভিজিয়ে দিচ্ছে জোলো আবহাওয়া। হোটেলের মূল বিল্ডিং-এ একটা বড়সড় কড়াইতে পোড়ানো কয়লা রাখা, সেটা তাপ নিয়ে নিজেকে গরম করার ব্যবস্থা। কিন্তু সে ফাঁদে পা দিলে আরও বিপদ, কড়াইয়ের তাপ থেকে সরে গেলে আরও ঠান্ডা লাগছে। নেমে এসে খানিক তাপ নিয়ে সামনের একটা ছোট্ট গুমটিয়ে ওয়াই ওয়াই খেলাম আবার। অন্ধকার বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঠান্ডা বাড়ছে। মাইনাসে নেমে গেছে টেম্পারেচার। মাঝে মাঝে খাপছাড়া মেঘ সরে তারা বেরোচ্ছে আর লোকজন উৎসাহী হয়ে উঠছে। সকালে সূর্যোদয় দেখতে না পেলে আসাই বৃথা। কয়েকজন দেখলাম এই ঠান্ডাতেও স্টারটেল এর লোভে ট্রাইপড, ক্যামেরা তাক করে বসে আছে। মানেভঞ্জনের পর থেকে মোবাইলে টাওয়ার নেই। এখানে একটা কর্নারে একটু আধটু টাওয়ার ধরছে। একবার ফোন করে শুধু বাড়িতে খবর দিয়ে দেওয়া গেল। সময় এমনিই এগোচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। 9 টার আগে ডিনার পাওয়া যাবে না। আগে টেকার্সদের জন্য ব্যবস্থা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ট্রেকার্সদের খুব ভিড় থাকে। বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে দল-বল নিয়ে ট্রেকিং করানো হয়। আমাদের রুমে বসে থাকা ছাড়া কোনও কাজ নেই। মোবাইলে ডাউনলোড করে রাখা নেটফ্লিক্স-এর সিরিজই ভরসা। এভাবে সময় কাটিয়ে অবশেষে মাটির উনুনের আঁচে বসে রুটি-সবজি-চিকেন দিয়ে ডিনার সারলাম। বেশি খাওয়া যাবে না। কারণ এ জায়গায় প্রাতঃকৃত্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ফ্লাক্সে গরম জল ভরে যখন বাইরে এসে দাঁড়ালাম, মেঘ একদিকে সরে সরে যাচ্ছে। তারা টিমটিম করছে। অর্ক Go Pro তাক করে তারার ছবি তুলতে মজল ওই ঠান্ডায়। খানিক সময় এভাবে কাটিয়ে রুমে গিয়ে 5 টায় এলার্ম দিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঠান্ডার চোটে বার বারই আমার ঘুম ভেঙে গেল।
আমাদের ঘরটার পাশেই বারান্দা। ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে সেখানে গিয়ে দেখি অন্ধকারের বুক চিরে লম্বা কমলা আলোর রেখা, আকাশে তারা চিকচিক করছে। এমন দৃশ্য আগে দেখিনি কখনও। ঠান্ডা থাকলেও লাগছে না আনন্দে। টুপি, গ্লাভস চাপিয়ে নীচে নেমে পড়লাম দুজনে। বাইরে ফ্রস্ট-এ গেট, গাছ সব ঢেকে আছে। হাত দিলে ঝুরঝুরে বরফ। কল, নালার মুখে জল বরফ হয়ে আটকে আছে। রাস্তায় নেমে বাঁদিকে তাকাতেই ঝলমল করে উঠল কাঞ্চনজঙ্ঘা। আধো অন্ধকারে কি মায়াবি লাগছে সে দৃশ্য।
তখনও আলোর রেখা পড়েনি স্লিপিং বুদ্ধার গায়ে। আমরা একটু উঁচুতে উঠে গিয়ে দাঁড়ালাম মোনাস্ট্রির কাছে। রাস্তা জুড়ে ফ্রস্ট, পা পিছলে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। পাহাড়ি ফুলগুলো ঝুরঝুরে বরফে ধবধবে। কমলা আলোর রেখা চওড়া হল ক্রমশ। অন্ধকার সরিয়ে সূর্য বেরিয়ে পড়ল আসতে আসতে। চারদিক তখন কমলা। ওদিকে আলোর আভা পড়তে লাগল কাঞ্চনজঙ্ঘার শরীর জুড়ে। সে দৃশ্য লিখে বোঝানোর না। চোখ ভরে শুধু দেখে গেলাম। দূরে পাহাড়ের এক ফাঁক দিয়ে দেখা গেল এভারেস্ট। সেখানে গোলাপি আর বেগুনি রঙের আভা।
রাস্তাটা সকালের রঙে দারুণ লাগছে। দূর থেকে তুমলিঙের দিকে নেমে আসা পথের দুধারে রোদ পরে ফ্রস্ট চকচক করছে। এ রাস্তাটাই মন জিতে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বরফে ধবধবে পথ দেখে মনে হচ্ছে বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে। রোদের তাপে ডুব দিয়ে হাঁটলাম বেশ কিছুক্ষণ। মুঠো বরফ নিয়ে খেলায় যোগ দিলাম ক্ষুদে নেপালি বন্ধুর সাথে। রোদের উষ্ণতা মেখে পাহাড়ের গায়ে মেঘের আসা যাওয়া দেখলাম। তুমলিং যেমন সকাল উপহার দিল তার জন্য কষ্ট করে থাকা সার্থক। সার্থক পর্যাপ্ত শীত পোশাক না এনেও কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে লড়ে যাওয়া।
ক্রমশ…