লিখলে মন ভালো থাকে, লিখলে মনেও থাকে। ছোটবেলায় জোর করে ছন্দ মিলিয়ে কবিতা লিখে খাতা ভরাতাম প্রায়ই। বাবা লুকিয়ে সেসব লেখা দেখে প্রতিভা খুঁজতে চেয়ে ভীষণভাবে অসফল হয়েছিল, দোষ দিয়েছিল আমার অমনোযোগী মন আর যে কোনও কিছুই সহজে ছেড়ে যেতে দেওয়ায় স্বভাবকে। আমার কিন্তু খুব মজা হয়েছিল, নিজের জিনিস শেয়ার না করার মজা। খাতার ফাঁকে ছেঁড়া ডায়রির পাতা লুকিয়ে রাখার মজা। আমি আমার সব লেখাই চিরকাল প্রেমপত্রের মতো গোপন রাখতে চেয়েছি, নিজের রাখতে চেয়েছি। বন্ধুরা স্কুলের ডায়রির পিছনে লেখা কবিতা বয়ফ্রেন্ডের চিঠিতে না জানিয়ে টুকে দিলে ভীষণ কেঁদেছি, অন্য কেউ আমার লেখা দেখে ফেলার দুঃখে। শুধু কাছের বন্ধুদের থেকে কুড়িয়ে পাওয়া প্রশংসা পরম যত্নে রেখেছি মনের খাতার ভাঁজে।
সেই আমি কোনওদিনই ভাবিনি লেখাটাই একদিন জীবিকা হয়ে যাবে। আর যখন বুঝলাম জীবনের অনেক না পারা পেরিয়ে লেখাটাই তাও একটু-আধটু পারি, তখন ওসব দুঃখ, ভয়গুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না মোটেই। তবে কাজের জন্য লিখলে পেট ভরে, মন হু হু করে। সেই যে ছেলেবেলার সবুজ পাখিদের ছবি দেওয়া ডায়রিটা হঠাৎ মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় একলা আকাশের দিকে চেয়ে থাকা, জানলার গরাদ ধরে মন কেমন, জলের গায়ে আলপনা। সেই মনে পড়াগুলো বাঁচিয়ে রাখতেই নিজের জন্য মন খারাপের খাতা খুলি। এদিক সেদিক কথার ঝুলি উপুড় করে দি ইচ্ছেমতোন। নিয়ম না মেনে, বারণ না শুনে, যেমন খুশি লিখি।
সেই যেমন খুশি লেখার কথা, আমার ফুর্তির প্রাণের কথা, আমার একঘেঁয়ে আমির কথা, আমার টো টো কোম্পানি জীবনের কথা, আমার বেহিসেবি খাই-খাই-এর কথা, আমার নানানরকম খামখেয়ালির কথা, কথার ঝুলি থেকে বেরোতে চাইছে খুব। গাঁট খুললাম। কথা হোক অনর্গল।